নাগপুর পুলিশ আড়াইশো বছর আগে তৈরি হওয়া যৌন পল্লির দ্বার বন্ধ করেছে। ১৪৪ ধারা গঙ্গা যমুনা এলাকায় জারি করা হয়েছে। বর্তমানে যে ১৬টি পয়েন্ট দিয়ে শহরের ওই অঞ্চলে যাওয়া যায়, তার মধ্যে ১৫টি ব্যারিকেড দিয়ে সিল করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশি পাহারা প্রত্যেক মোড়ে রয়েছে। নজরদারি দিবারাত্র চলছে। ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করলেই কেউ বাইরে থেকে, তাকে পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও এলাকায় টহল দিচ্ছে কমপক্ষে তিনটি পুলিশ ভ্যান। CCTV ক্যামেরা ভ্যানে ইনস্টল করা হয়েছে হেডকোয়ার্টার থেকে সরাসরি নজরদারি চালানোর জন্য। বর্তমানে দু’হাজার মহিলা রয়েছেন তিন একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত ওই যৌন পল্লিতে। একা থাকেন কিছুজন। তবে এলাকায় বেশিরভাগই সন্তানাদি নিয়ে থাকেন । নাগপুরের পুলিশ কমিশনার অমিতেশ কুমার গত ১১ অগাস্ট নির্দেশ দেন গঙ্গা যমুনা এলাকা বন্ধ করে দেওয়ার। যার জেরে এলাকার মহিলারা রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
ফলত কারও আয় নেই গত এক মাস ধরে। যৌন শ্রমিকরা কেমন আছেন?
১৪ বছর বয়সে জয়া (নাম পরিবর্তিত) বন্যা কবলিত ওডিশার ফুলবনি থেকে নাগপুরের গঙ্গা যমুনায় এসেছিলেন। ৩০ বছরের মহিলা বলেন, ‘আমাদের ভাঁড়ার শূন্য হয়ে গিয়েছিল সেই বছর। আমি নাগপুরে চলে এসেছিলাম কোনওক্রমে পালিয়ে। অবশেষে কাজ খুঁজতে গিয়ে এখানে ঠাই হল’। আজ সেই একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি আবার। বলতে পারেন ভাগ্যের পরিহাস। মরার অবস্থা হয়েছে না খেতে পেয়ে’। সদ্য দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে জয়ার বড় ছেলে। ছোট মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। বর্তমানে তিনি তাঁদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। তাঁর কথায়, ‘এখন কোনও সুযোগ নেই পিছিয়ে যাওয়ার। আমি আমার সন্তানরা পড়াশোনা করতে পারবে না রোজগার না করলে’।
পুলিশ সূত্রে খবর, ১৮৮টি পৃথক পতিতালয় রয়েছে নাগপুরের গঙ্গা যমুনা ওরফে ইটওয়ারি এলাকায়। যার মধ্যে ছোট একাধিক বাড়ি রয়েছে ৩০টি বহুতলের পাশাপাশি। বেশিরভাগ মহিলারাই পতিতালয় চালান। অনেক যৌনকর্মী গঙ্গা যমুনার অন্দরে বা বাইরেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত, যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া অপরাধ ছিল ১৯৫৬ সালের IPTA আইন অনুযায়ী এবং যাঁরা ওই পেশায় আসতেন, তাঁদের পরিস্থিতির শিকার হিসেবেই গণ্য করা হত। পুলিশ তাঁদের হোমে পাঠিয়ে দিত উদ্ধার করে। যদিও সেই আইনে পরিবর্তন এসেছে পরবর্তীতে।
এক জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইনজীবী নিহালসিং রাঠোর বলেন, ‘ITPA আইনে ১৯৭৪ সালে পরিবর্তন এসেছে। যেসব মহিলারা স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসতে চান, অপরাধী বলা যায় না তাঁদের’। তবে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন,বর্তমান সময় পর্যন্ত ২০১১ সাল থেকে, প্রায় ৩৫৫টি মামলা রুজু হয়েছে ওই এলাকায়। যার মধ্যে প্রায় ১৬টি মামলা রয়েছে POCSO আইনের আওতায়। গঙ্গা যমুনা এলাকাকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্রমশ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার ফলেই, দাবি পুলিশের।