অপারেশন চলাকালীন কোনো কোনো সময় অস্ত্রোপচারের ধকল নিতে না পেরে রোগীর হৃদযন্ত্র অনেক সময় স্তব্ধ হয়ে যায় অপারেশন থিয়েটারে। এমন ঘটনা হয়তো শোনা যায়। কিন্তু সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃদযন্ত্র -এ আবারও স্পন্দন ফেরানো নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা তো অবশ্যই, অতি বিরল বললেও অতিরঞ্জিত করা হবে না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের ডাক্তারের কাছেও এই অস্ত্রোপচারের ঘটনা মনে রাখার মত। অতি সম্প্রতি তো দূর অস্ত, অতীতেও এমন ঘটনা কটা ঘটেছে কেউ মনে করতে পারছেন না।
এমন ঘটনা জানার পর কেউ বা বলছেন মিরাক্যাল! কেউ বলছেন ঈশ্বরের করুনা। কেনোনা অপারেশন টেবিলে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যাওয়া রোগী নাহলে কি করে বেঁচে উঠল।কলকাতা মেডিক্যালের চিকিত্সকরা এমনটা হওয়ার পর দ্রুত ব্যাবস্থা নিলে ফের বেঁচে ওঠেন তিনি। গলায় ফুটো করে কৃত্রিম শ্বাসনালীর মাধ্যমে তার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়া বজায় রেখে বেশ কিছুদিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা চলে ওই বৃদ্ধের। অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পর এখন সুস্থ রয়েছেন মেদিনীপুরের কাঁথির বৃদ্ধ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হল সাক্ষী থাকল এই বিরল অভিজ্ঞতার।
মুখে বড় মাপের এক টিউমার আস্তে আস্তে জীবন বিপন্ন করছিল কাঁথির কাপাসদা গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ বেরার। করোনা আবহে এই অস্ত্রোপচার করতে রাজি হয়নি অনেক হাসপাতাল। না করে দেয় এইমস-ও। অবশেষে জটিল টিউমারটি অস্ত্রপাচার করার সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সার্জারি বিভাগের ২ নম্বর ইউনিটে তাকে অপারেশনের আগে ভর্তি করানো হয়। বেশ কিছুদিন নানা শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা, আর শারীরিক অবস্থায় পর্যবেক্ষণের পর ঝুঁকি নিয়ে সত্তর বছর বয়সি ওই বৃদ্ধ এর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকরা। এই জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ একটি টিমও তৈরি করেন। সেই অপারেশনের টিমের প্রধান ছিল ডক্টর শান্তনু সেন। তার নেতৃত্বে এই চিকিৎসকদের টিমে ছিলেন তমাল সেনগুপ্ত, ব্রতীশ দে, পুষ্পক দে, বিশ্বনাথ বর্মন, ঐষণা সিং ও কোয়েল মিত্র।
এই অস্ত্রোপচার কতটা যে চ্যালেঞ্জিং ছিল তা নিজের মুখেই জানান অস্ত্রোপচারের কাণ্ডারীরা। সার্জেন তমাল সেনগুপ্তর কথায়, “ হৃদস্পন্দন সাময়িক ভাবে বন্ধ হওয়ার মতো উপক্রম হয়েছিল। যেটা তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন অ্যানেসথেটিস্টদের তৎপরতায়। এটা বলাই যায় হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মুহূর্তের জন্য। অ্যানেসথেটিস্টদের তৎপরতায় এবং অবশ্যই গোটা টিমের তৎপরতায় আবার ফেরত আসে হার্ট রেট কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। তার পর অস্ত্রোপচার আবার করা হয়। অপারেশন খুব ভাল ভাবে হয়। তাঁকে বাড়ি পাঠাতে পেরেছি একেবারে সফল অস্ত্রোপচার করে ।”
সাফল্য বিরল অস্ত্রোপচারে। রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গর্বিত সকলেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিত্সক থেকে কর্মী। বিভাগীয় প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্যের কথায়, “অপারেশন থিয়েটারের টেবিল। একটা মেজর সার্জারি হচ্ছিল নিশ্চয়ই। যার ফলে এটা কাটিয়ে উঠেছে এবং রোগীকে অপারেশন টেবিল থেকে বাইরে বের করে এনেছে, সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণে রেখেছে। নিঃসন্দেহে টিম ওয়ার্ক এই সফলতার সম্পূর্ণ দাবিদার।”