মৃত্যুকে নিষিদ্ধ করে এমনও কোনো আইন পাস করা হয় পাগলের কাজ না হলে হাস্যকর। এমনও নয় যে মৃত্যু অবৈধ হলেও যারা এই আইন মানবে না তাদের আজীবন কারাগারে সাজা দিতে পারা যাবে। কেনোনা দোষী তো ইতিমধ্যেই মৃত।
তবুও, এর অযৌক্তিকতা সত্ত্বেও, মৃত্যুর মতন স্বাভাবিক ঘটনাটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার উদাহরণ অতীতে বিদ্যমান ছিল, এবং এখনও কিছু জায়গায় রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ প্রাচীন গ্রীসে হিপোক্রেটসের পুত্র পিসিসট্রাটাস তার প্রজাদের ডেলোসের পবিত্র দ্বীপ পরিষ্কার করার আদেশ দিয়েছিলেন। আদেশের মধ্যে ছিল সেই দ্বীপে সমাধিস্থ সমস্ত মৃতদেহ নিষ্কাশিত করা। এরপর এই পবিত্র ভূমিতে কাউকে মরতে বা জন্ম দিতে দেওয়া হয়নি।
বিশ্বের অন্য প্রান্তে জাপানের ইটসুকুশিমা (Itsukushima) দ্বীপটি জাপানের মানুষের কাছে একটি পবিত্র উপাসনালয়। পবিত্র ভূমিকে পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশে মাটির নিচে পচে যাওয়া মৃতদেহ থেকে পরিষ্কার রাখার জন্য ওই দ্বীপে মৃতদেহের সমাধিস্থ করা নিষিদ্ধ হয়েছিল এবং যাতে ওই দ্বীপে কেউ মারা না যান সেই সতর্কতা নিতে বয়স্ক বা অসুস্থদের জাপানের মূল ভূখণ্ডে স্থানান্তরিত করা দেওয়া হয়েছিল।
একইভাবে উত্তর মেরুর কাছাকাছি, নরওয়েজিয়ান (Norwegian)। নরওয়ের লঙিয়ারবিয়ানে বসবাসকারী কোনও মানুষ মারা গেলে তাকে হলে তাকে সেখানে সমাধিস্থ করা যায় না। তাকে লঙিয়ারবিয়ানের সীমানার বাইরে কোথাও সমাধিস্থ করতে হয়। এই শহরে ইদানিং আসা বাসিন্দাদের জন্যে স্থানীয় কবরস্থানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিষিদ্ধ। ট্রন্ডহাইমের নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার এবং অ্যাডজান্ট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জন ক্রিশ্চিয়ান মেয়ার ব্যাখ্যা করেছেন, “যদি আপনার জীবনের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে বলে মনে হয়, আপনাকে মূল ভূখণ্ডে পাঠানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।” গত প্রায় ১০০ বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে ঐ শহরে। এর কারণ ওই অঞ্চলে ১৯১৭ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর আকার নেয়। সেই সময় বহু মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভুগে মারা যান। কিন্তু মৃতদেহ সমাধিস্থ করার সময় দেখা দেয় একটা সমস্যা। ওই নরওয়ে নিকটস্থ লঙিয়ারবিয়ানে তাপমাত্রা এতটাই কম যে, সেখানে সমাধিস্থ মৃতদেহগুলিতে পচন ধরে না, সেগুলি প্রায় অবিকৃত থেকে যায়। এতে আরেকটি চিন্তাও সামনে এসে সেই ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার। কেনোনা তাপমাত্রা কম হওয়ার কারণে মৃতের শরীরের রোগ জীবানুও একই ভাবে সুরক্ষিত থেকে যাচ্ছে ঠান্ডায়। তাই তাঁরা সেখানে সমাধিস্থ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।