করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬২ বছরের এক ব্যাক্তির। সেই শোক সামলাতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন তার স্ত্রী এবং মেয়ে। মৃত স্ত্রীর ও কন্যার নাম দীপা দাস (৪২) এবং জয়া দাস (২২)। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ওই ব্যাক্তির নাম বাবুল দাস। মারা যাওয়ার পর ওই ব্যাক্তির সৎকারে গিয়েছিল পরিবার। বাড়ি ফিরে তার স্ত্রী ও কন্যার প্রাণহীন দেহ উদ্ধার করেন তাঁরা। এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার কল্যাণী পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বুদ্ধ পার্ক এলাকায়। করোনা মানসিক ভাবে আঘাত করছে কতটা এই নিয়ে উদ্বিগ্ন মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা।
পরিবার পরিজন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ অগাস্ট বাবুল দাস, তার স্ত্রী দিপা দাস এবং মেয়ে জয়া দাস এই তিনজনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কল্যাণী বুদ্ধ পার্কের বাসিন্দা বাবুল বাবুর পরিবারের বাকিদের তুলনায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কল্যাণী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু বাড়িতেই হোম আইসলেশনে থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন তার স্ত্রী ও মেয়ে। রবিবার সকালে কল্যাণীর জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে বাবুল দাসের মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। এর পর আশেপাশের মানুষ ও প্রশাসনের উদ্যোগে বাবুল দাসের মৃতদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যায় তার পরিজনেরা। কিন্তু তার স্ত্রী ও মেয়ে হাসপাতালে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ দেখে এলেও শশ্মানে আর যাননি তাঁরা।
শশ্মান থেকে ফিরে পরিবারের লোকের দেখে তার বাড়ির দরজা বন্ধ। ওই ব্যক্তির স্ত্রী এবং মেয়েকে বাইরে থেকে অনেক ডাকাডাকি করলে কোনও সাড়াশব্দ আসেনি। ফলত দরজা ভেঙে বার করে আনা হয় তাঁদের ঝুলন্ত দেহ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান আত্মহত্যা বলেই। পাড়া প্রতিবেশীর দাবি, শোক সামলাতে না পেরেই এই সিদ্ধান্ত মা এবং মেয়ের। যদিও এ বিষয়ে পরিজনের কোনও বক্তব্য এখনও মেলেনি। তবে মৃত্যুর পুরো কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। কল্যাণী থানার পুলিশ মা এবং মেয়ের দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে ময়নাতদন্তের জন্য। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কী কারণে মৃত্যু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, বাবলু দাস করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই ভীষণ ভেঙ্গে পরেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন লাগছিল। কিন্তু এর থেকে যে তিনি এমন চূড়ান্ত পদক্ষেপ করবেন তা কল্পনা করতে পারেনি কেউ।
দেড় বছর ধরে চলা করোনা মহামারী এবার কি বাড়াচ্ছে অবসাদ? নদিয়ার কল্যাণীর করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়ির কর্তার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী-কন্যার এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতে উঠে আসছে এই প্রশ্নই।