স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে শনি আর রবিবার দীঘা বেড়াতে এসেছেন বহু মানুষ। করোনা বিধি মাথায় রেখেই ঘরের কাছের সৈকত শহরে সমুদ্রের আনন্দ উপভোগ করতে এসেছেন অনেকেই। কিন্তু এসে আজ এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী থাকল। যে কারণে দিঘা বেড়াতে এসে সমুদ্রস্নান করা হল না আগত পর্যটকদের। আচমকাই পাল্টে গেল দিঘার সমুদ্র।
নীলাভ রঙের সমুদ্রের জলের রঙ পাল্টে হয়ে গেল কালচে ঘোলাটে আর কর্দমাক্ত। জানা গিয়েছে, আজ শনিবার সকালবেলা সাড়ে নটা থেকে দশটা নাগাদ সমুদ্রে আসে জোয়ার আসে। জোয়ারের জলে উত্তাল হয়ে ওঠে দিঘার সমুদ্র। দেখা যায় বেশ ভালো রকমের জলোচ্ছ্বাস।
কিন্তু ঠিক ওই জোয়ার এর জলোচ্ছাসের পরেই সমুদ্রের জল হয়ে যায় একেবারে ঘোলাটে, কালো। সাথে সাথে কাঁদাটে হয়ে যায় সমুদ্রের জল একেবারে। চোখে পড়ার মতো পর্যটকের আগমনে সরগরম দীঘার সমুদ্র সৈকতে শনিবার সকালবেলা যারা সমুদ্রস্নানের প্রস্তুতি নিয়ে আসেন তাঁরা একেবারে হকচকিয়ে যান জলের রং দেখে।
এমন কালচে কাদামাখা জল দেখে স্নান করতে নামেননি অনেক পর্যটক। যে কয়েকজন নেমেছেন তাঁরা উঠেছেন সারা শরীরে কাদা মেখে। শুধু জলের রং যে কালো ঘোলাটে হয়েছে তাই নয়, ওই কর্দমাক্ত জলে নেমে যারা স্নান করেন তাদের শারীরিক অস্বস্তিও অনুভূত হয়।
যা নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শনিবার সকালে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের।দীঘার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এর আগেও সমুদ্রের জল এরম ঘোলাটে হয়েছে, তবে এবারের মত আগে হয়নি।
বেশ কয়েকবছর পর সমুদ্রের জল কর্দমাক্ত হল। তাও এতটা বেশী। প্রত্যক্ষদর্শী পর্যটকরা জানান, ‘হঠাৎ করেই জোয়ার আসার সমুদ্রের জল ঘোলাটে হয়ে ওঠে।’ সেই সময় অনেক মানুষ সমুদ্রে স্নানে নেমেছিলেন। কালো কাদামাখা জলে স্নান করায় তারা বেশ শারীরিক অস্বস্তিও বোধ করেন। এরপরই বাড়তি কোনো ঝুঁকি এড়াতে কালো জল দেখা মাত্রই পর্যটকদের সমুদ্র থেকে তুলে দেন দীঘার প্রশাসনের নুলিয়ারা।
যদিও সমুদ্রের জলের এই হঠাৎ রং বদলের কারণ কি তারা ধারণা করতে পারছে না।’প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিঘায় সমুদ্রের জল এরম কাদা মাখা হয়ে যাওয়ার ঘটনা আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে। তবে এবারের মতন এতটা কালো হয়ে যাওয়ার ঘটনা কেউ মনে করতে পারছে না।
কী কারণে দীঘার সমুদ্রের জলে এরকমটা ঘটল তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। দিঘা থানার ওসি সত্যজিৎ চানক্য এই বিষয়ে জানান, আপাতত দীঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে মানা করা হয়েছে। কেউ যাতে এই মুহূর্তে সমুদ্রে না নামে সে বিষয়ে দিঘা প্রশাসন নজর রাখছে। নুলিয়ারা সমুদ্র সৈকতে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে।তবে চাঞ্চল্য ছড়ালেও উদ্বেগের তেমন কোনো কারণ নেই বলে জানাচ্ছেন সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা।
তারা ব্যাখ্যা করেন, দিঘার সমুদ্র সৈকত ভাগিরথী নদী ও সুবর্ণরেখার নদীর মোহনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগাতার বন্যায় ২টি নদী এখন জলে টইটুম্বুর।
তার ওপরে দামোদরেও বহু অঞ্চল বন্যাকবলিত। সেই সব এলাকা থেকে জল নামছে আর বয়ে আনছে প্রচুর পলি যা সমুদ্রে এসে পড়ছে। সমুদ্রের জল লবনাক্ত হওয়ায় কারণে দ্রাব্যতা কম হওয়ায় নদীর জলের সাথে আসা সেই পলি অধঃক্ষিপ্ত হচ্ছে।
তার ফলে সমুদ্র সৈকতে এসে পৌঁছচ্ছে কর্দমাক্ত জল। নদীর জল নামলেই সমুদ্রের রঙ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।