Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

কনের সন্মান রাখতে বিয়ের দিন দুর্ঘটনায় আহত বরকে বিয়ে করতে পাঠালেন ছেলের মা

বিয়ে করতে যাওয়ার সময়ে পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হয়েছেন বর। বরের সাথে একই সময়ে বিয়েতে আসার সময় দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছেন তাঁর দিদি ও ছোট্ট ভাগ্নিও।
হাসপাতালে রীতিমত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তারা। এমন অবস্থায় দাড়িয়ে বিয়ের কথা ভাবা সম্ভব নয়। স্বাভাবিক ভাবেই উপক্রম হয় বিয়ে ভাঙার। কিন্তু আজও এরম ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে কাদা ছেটানো শুরু হয় মেয়েটিকেই। ‘লগ্নভ্রষ্টা’ বলে অপবাদ দেওয়ার পাশাপাশি বিয়ে ভাঙার মত অবস্থা তৈরি হতেই কনেকে অপয়া ইত্যাদি নানা অপবাদে বিদ্ধ করতে শুরু করেছিলেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। সামাজিক সংস্কার আর অপবাদের এই সমস্ত তকমা মেয়েটির গায়ে না লাগতে দেওয়ার জন্য সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে ওই রাতেই ছেলেকে বিয়ে করতে পাঠালেন মা।

ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের লাচ্ছোর গ্রামে। বৃহস্পতিবার রাতে বিয়ে করতে রওনা দিয়েছিলেন রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জ ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা বাবুরাম কর্মকার। কনের বাড়ী পৌঁছোনোর আগেই করনদিঘি থানার বিলাসপুর এলাকায় একটি লরির সঙ্গে জোর ধাক্কা লাগে হয় বরযাত্রীর গাড়ির। গাড়ির সাথে লরির ধাক্কায় বিয়ের পাত্র বাবুরাম-সহ অন্তত দশ জন বরযাত্রী গুরুতর ভাবে আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সকলকে। এর মধ্যে বরের দিদি ও তিন বছরের ভাগ্নি-সহ তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিয়ের রাতে যদি বরের সাথে কোনওরকম দুর্ঘটনা হয় সেই ক্ষেত্রে আজও সমাজের কুসংস্কার খোঁজে মেয়েটির দোষ। কিছু হলে আজও কনেকে অপয়া বলে খুব সহজেই লাগিয়ে দেওয়া হয় অপবাদ। সমাজ ব্রাত্য করে তাকে। এমনকি পাত্রীকে ‘ লগ্ন ভ্রষ্ট’ অপবাদে দগ্ধ করা হয়। এহেন সামাজিক রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন বরের মা চাঁদমনি কর্মকার। মেয়েটিকে যাতে সমাজ কোনো ভাবেই কুনজরে না দেখে সেই কারণে সেই রাতেই ছেলেকে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছুটি করিয়ে বিয়ে করতে কনের বাড়িতে পাঠান তিনি। মায়ের নির্দেশ মতো ডান হাতে আঘাত নিয়েই বিহারের লাচ্ছোর গ্রামে মেয়ের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন বাবুরাম।

চাঁদমনির কথায়,, ‘‘একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, সেটা মা হয়ে আমি হতে দিতে পারি না।’’

তিনি আরও বলেন ‘‘আজ বিয়ে না হলে কোনো দোষ ছাড়াই সবাই অপয়া বলে তকমা দিত। এক জন মা হয়ে এটা আমি হতে দিতে পারি না। বৌমার সামাজিক সম্মান যাতে অক্ষুন্ন থাকে তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ছেলে তো শুধু হাতে আঘাত পেয়েছে এছাড়া তো সুস্থই আছে, তাই ওকে এই রাতেই বিয়ে করতে পাঠালাম। ’’

চাঁদমনির এই সিদ্ধান্ত তে সম্মতি জানিয়েছেন বর ও কোন দুই পরিবারের সদস্যরাই। পাত্রের পরিবারের আত্মীয় স্বজনরা বলছেন, ‘‘দুর্ঘটনা তো যেকোনো সময়ই ঘটতেই পারে। কিন্তু বিয়েটা না হলে কনেকে সমাজে অন্য নজরে দেখা শুরু হয়ে যায়। দেওয়া হয় অপয়া লগ্নভ্রষ্ট ইত্যাদি তকমা। এই কারণে বিয়ের জন্যে নির্ধারিত রাতেই ওদের বিয়ে দেওয়া হয়।’’ এই দৃষ্টান্তমূলক ঘটনার সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী কৌশিক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘বর বাবুরাম কর্মকারের মা এবং তার পরিবারের স্বজনের এই সিদ্ধান্ত সমাজে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। নিজের মেয়ে আর নাতনি যেখানে আশঙ্কাজনক, সেখানে আরেকটি মেয়েকে সামাজিক কুনজরেরর থেকে বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাত্রের মা। এর জন্য তাঁর প্রশংসা প্রাপ্য।’

Related posts

MBA করেও চার বছরে হয়নি চাকরি, চায়ের দোকান খুলে ৩ কোটি টাকার চা বিক্রি করেছেন এই যুবক

News Desk

অলিম্পিকে সাফল্যের পিছনে নিয়মিত সেক্স! চাঞ্চল্যকর দাবি ৩বার অলিম্পিকে সোনাজয়ী সাঁতারুর

News Desk

ফলের রস ভেবে দাদুর রাখা মদ পান করে মৃত্যু ৫ বছরের শিশুর, নাতির মর্মান্তিক পরিণতি দেখে মৃত বৃদ্ধও

News Desk