কলকাতার জল যন্ত্রণার চিত্রটা খুব একটা নতুন নয়। কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেই হলেই কলকাতা শহরের একাধিক এলাকায় জল দাড়িয়ে যায়। একটানা বৃষ্টি বা নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি যে আরো কতোটা শোচনীয় হয়ে ওঠে প্রতিবার বর্ষাতেই তা টের পায় শহরবাসী। আর এই জল জমার জন্য বেশিরভাগ সময়েই দায়ী করা হয় শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাকেই।
শহরে এই ভাবে কোথাও এক হাঁটু বা কোথাও এক কোমর জল জমে থাকার জন্য এতদিন ড্রেনের মধ্যে জমে যাওয়া প্লাস্টিককেই দায়ি করা হতো। কিন্তু যদি দেখা যায় প্লাস্টিক নয় ড্রেনের ভেতরে রয়েছে একাধিক বালির বস্তা, পাঁজা পাঁজা ইঁট, লেপ, তোষক আরো কত কি তাহলে অবাক হতে হয় বৈকি। এমন আবার হয় নাকি, ম্যানহোলের নিচে ড্রেনেজ সিস্টেম কেন কাজ করছে না তার তদন্তে কলকাতা পুরসভার ডুবুরি নামিয়ে রবিবার এই সমস্ত বস্তুই উদ্ধার করা হয়েছে।
আসলে ঘটনাটা ঠিক কি?
বৃহস্পতি ও শুক্রবারের প্রবল বৃষ্টিপাতের পর জল দাড়িয়ে পড়েছিল কলকাতা পুর এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ। বেশ অনেকগুলি এলাকায় জল তাড়াতাড়ি নেমে গেলেও, বহু জায়গা এখনও দাড়িয়ে রয়েছে জলের তলায়।
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার বোরো ১৫ এর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়েই অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যাচ্ছিল এবং সেই জমা জল কিছুতেই নামছিল না। কিন্তু পুরসভার মতে ওই অঞ্চলের ড্রেনেজ সিস্টেম যথেষ্ট ভাল। ওই অঞ্চলের জমা জলের অবস্থা এমন হওয়ার কথা তো নয়। এই ঘটনা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠে পুরোসভার কর্তাদের জন্যে। নিকাশি ব্যবস্থা তো যথেষ্ট ভালোই রয়েছে। এমনকি যদি ভারী বর্ষণও হয় তাতে জল জমলেও সেই জল দ্রুত নেমে যাওয়ার কথা।
এই কারণ খতিয়ে দেখতে রবিবার কলকাতা পুরসভার ৮০ নম্বর ওয়ার্ড এবং মহেশতলা পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড পাশের রামনগরের টি জি রোডের বেশ কয়েকটি জায়গায় ম্যানহোল খুলে ডুবুরি নামানো হয়। জল জমে থাকা এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা পাওয়া যায় দেখে চোখ কপালে ওঠে পুরো কর্তাদের? ভেতর থেকে একে একে উদ্ধার হয় একের পর এক বালির বস্তা, প্রচুর ইঁট, লেপ, তোষক ইত্যাদি।
পুরসভার ডুবুরি শহিদুল মোল্লা জানান, ‘নিকাশি নালার ভেতরে দু’ফুট মত পাইপের মধ্যে এই সব জিনিসপত্র জমা হয়েছিল।’
কলকাতা পুরসভার কর্তাদের মধ্যে অন্যতম সদস্য তারক সিং বলেন, “আমরা খেয়াল করি, কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে জল নামছে না। কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা রীতিমত আশ্চর্য হয়ে যাই। আমি পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে এই নিয়ে রিপোর্ট জমা দেব। তারপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। যারা এই ধরনের কাজ করেছে তাদের ধরা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”