প্রেমের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় বাধা হয়েছে দাঁড়ায় পরিবার। আর তাই অনেকেই পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ির অমতে বিয়ে করা বা বাড়িতে রাজি নয় তাই পালিয়ে বিয়ে করলে তো হয়েই গেলো। এরপর আর বাড়িতে মেনে নেবে কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এমনও মন্দির আছে যেখানে পালিয়ে বিয়ে করা যুগল দের আশ্রয় দেওয়া হয়। পালিয়ে বিয়ে করে অনেক যুগলেই এই মন্দিরে নিজের আশ্রয় নেন। সেখানকার গ্রামবাসিরা তাদের পাশে দাঁড়ান, সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কোথায় এই মন্দিরটি রয়েছে?
উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ এমন এক গ্রাম রয়েছে যেখানে এই মন্দিরটি রয়েছে। এক বিশেষ প্রথার জন্য এখানকারই সাঙ্গর গ্রামের শাংচুল মহাদেব মন্দিরটি বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। অনেকের মতে , মহাভারতের-ও এই মন্দিরের সঙ্গে নাকি যোগ রয়েছে। এমন কথিত আছে যে নিভৃতবাসে থাকার সময় পান্ডবরা এখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন।
মহাদেব নিজেই এই মন্দিরে এমন যুগলদের আশ্রয় দেন। এরসাথে এক ইতিহাস জড়িত আছে। স্থানীয়দের মতে পান্ডবরা যখন এই গ্রামে এসেছিলেন তখন স্বয়ং মহাদেব তাদের রক্ষা করেছিলেন। অজ্ঞাতবাসে থাকার সময় পান্ডবরা যখন এখানে আসেন তখন কৌরবরা পান্ডবদের পিছু নিয়ে এখানে চলে আসেন। সে সময় পান্ডবরা উপায় না পেয়ে এই গ্রামের মহাদেবের মন্দিরে উপস্থিত হন। কৌরবরা সেই মন্দিরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মহাদেব নিজেই তাদের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি নাকি নিজেই এই গ্রামবাসীদের বলে যান যে কেউ যদি এই গ্রামে কেউ আশ্রয় নিতে আসে তবে গ্রামবাসিরা তাদের যেন আশ্রয় দেন।
গ্রামের বাসিন্দারা আরও জানান যে , মহাদেবের সৃষ্টি এখানকার সব আইনকানুন। তাই একটু ভিন্নভাবেই জীবনযাপন করে এখানে সারা গ্রামের মানুষ। এই গ্রামের মন্দিরটিতে আশ্রয় নিতে পারে প্রেমিক-প্রেমিকারা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। গ্রামের মানুষই দায়িত্ব নিয়ে সবটা সম্পন্ন করান তাঁদের বিয়ের ইচ্ছা থাকলে। আর তখন বাইরের কেউ তাঁদের বিয়েতে বাধা দিতে পারেনা। এমনকী পুলিশকেও এই গ্রামে রীতিমতো অনুমতি নিয়েই ঢুকতে হয়। তাঁরাও মেনে নেন স্থানীয় রীতিকে সম্মান জানিয়ে এই নিয়ম। যদি বাড়ি থেকে কেউ আসেন ওই যুগলের বিয়ে ভঙ্গ করতে তবে এই গ্রামের মানুষ তাদের বাড়ির লোককে আটকাতে চলে আসেন। তবে এই মন্দিরে এইসব কিছুর পাশাপাশি রয়েছে আরও কিছু নিয়ম। যেমন এই গ্রামে কোনও অস্ত্র নিয়ে প্রবেশাধিকার নেই কারও। মদ্যপান ধূমপান একইসঙ্গে নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এই গ্রামে কোনরকমের চামড়ার জিনিস ব্যবহারেও । প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা সত্যিই এক আশ্চর্য জায়গা এই মন্দির। তেমনই আশ্চর্য তার নিয়মকানুন। পুজো আর প্রেমের মিলেমিশে যাওয়ার এমন নমুনা মুগ্ধ করে সকলকে।