তৃণমূল নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিষয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। বলাই বাহুল্য এই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় তিনিই যে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির মামলায় বরখাস্ত এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুক্ত তিনটি কোম্পানি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) স্ক্যানারে রয়েছে। ED-এর জিজ্ঞাসাবাদে অর্পিতা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন যে তিনি ২০১২ সাল থেকে পার্থ চ্যাটার্জির সংস্পর্শে এসেছিলেন। কিন্তু অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের অনেক জাল কোম্পানির নথি ইডি আধিকারিকদের হাতে এসেছে। এর মধ্যে একটি ভুয়ো কোম্পানির ঠিকানায় পৌঁছে দেখা গেছে সেটি আদতে একটি বিয়ে বাড়ির লজ আর অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়া কিছুই না। এর পাশাপাশি দেখা গেছে সেখানকার কেয়ারটেকারই নাকি এই কোম্পানির সিইও।
আমাদের জানিয়ে দেওয়া যাক যে গত ২২শে জুলাই, যখন ইডি অর্পিতার অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায়, তখন আধিকারিকরা ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদ, সোনার গয়না এবং বিদেশী মুদ্রা উদ্ধার করেছিলেন। পরদিনই ইডি বেলঘরিয়ায় তার দ্বিতীয় অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ২৭ কোটি টাকা, সোনার বাট এবং ৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বাজেয়াপ্ত করেছে।
কোম্পানির ঠিকানায় বিবাহ হল:
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে কলকাতা-ভিত্তিক তিনটি সংস্থার পরিচালক হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, যদিও পরে তাকে পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিম্বিওসিস মার্চেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড এবং ইচ্ছা এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড এই তিনটি সংস্থা যা বর্তমানে ইডি আধিকারিকদের স্ক্যানারের অধীনে রয়েছে৷ জানা যাচ্ছে এগুলি সবকটিই ভুয়ো কোম্পানি। ইচ্ছা এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড ভবনে একটি মাত্র ডাকবাক্স ছিল, যেখানে কোম্পানির নামে একটি ছোট স্লিপ ছিল। কোন সাইনবোর্ড ছিল না। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে প্রাঙ্গণটি একটি ব্যাঙ্কুয়েট হল বা বিবাহ হল হিসাবে পরিচালিত হত, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ৩১শে অগাস্ট এখানে অভিযান চালায় ইডি। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে।
কেএমডিএও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে
কেএমডিএ ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের রেকর্ডে পাওয়া ইচ্ছা এন্টারটেইনমেন্টের ঠিকানায় গরমিল পাওয়া গেছে। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নথিতে একই স্থানে অর্থাৎ ৯৫ রাজডাঙ্গা মেইন রোডের ঠিকানা একজন কৃষ্ণ গোপাল করের নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই ভবনটি আগে ৯৫ রাজডাঙ্গা মেইন রোডে ছিল না। ওই ব্যক্তি আরও দাবি করেছে যে তার পরিবারের একই ঠিকানা ছিল এবং এটির অপব্যাবহার করা হয়েছে কোম্পানির দ্বারা। কেএমসির তদন্তেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্বভাবতই যত দিন যাচ্ছে দুর্নীতির জট আরো গভীরে যে রয়েছে সেটা প্রকাশ পাচ্ছে।