সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছেলের সাথে বন্ধুত্ব এবং তারপর তার সাথে প্রেম ১৫ বছরের একটি মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার এই নাবালিকা, যার সাথে সে তার জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে পালিয়ে গিয়েছিল, তাকে বিক্রি করে দেয়। এরপর চার মাসে তিনবার মেয়েটিকে বিক্রি করা হয়। শুধু তাই নয়, এসময় তাকে ধর্ষণও করে অনেকে। ৩০ বছর বয়সী একজনের সাথ জোর করে বিয়েও দেওয়া হয়েছিল। পুরো ব্যাপারটা কি জানেন?
সংবাদ সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বসবাসকারী এক মেয়ের ৭ বছর আগে একটি ছেলের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচয় হয়। তারা প্রেমে পড়েন। স্কুলের অজুহাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল মেয়েটি। ২০১৫ সালের ৭ই জানুয়ারী, মেয়েটি কলকাতার সায়েন্স সিটির কাছে ছেলেটির সাথে দেখা করে। এখান থেকে তারা বাবুঘাটে যান। যেখান থেকে তারা বিহারের বাস ধরে।
তদন্তে জানা গেছে, রাহুল মেয়েটিকে বাসে রেখে দ্রুত ফিরে আসবে বলে পালিয়ে যায়। কিন্তু তিনি আসেননি। মেয়েটিকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে পালিয়ে যায় সে। এর পর বাসে উঠলে অন্য একজন নিজেকে রাহুলের বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। তিনি মেয়েটিকে হাওড়া স্টেশনে নিয়ে যান। যেখান থেকে ট্রেনে করে বিহারে পৌঁছান তারা। বিহারে কমল নামে এক ব্যক্তির কাছে মেয়েটিকে বিক্রি করা হয়। তিনি তাকে উত্তর প্রদেশের বিজনোরের এক মহিলা চিত্রার কাছে নিয়ে যান।
চিত্রা তাকে কিনে তার ৪৫ বছর বয়সী ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়। এক মাস পরে, লোকটি তাকে চিত্রার বাড়িতে ফেলে দিয়ে যায়। এরপর ওই মহিলা চিত্রার ছেলে তাকে ধর্ষণ করতে শুরু করে।
মেয়েটা কিভাবে পালালো?
চিত্রার বাড়িতে থাকার সময় একদিন মেয়েটি তার হাতে মোবাইল পায়। মেয়েটি তার মাকে তথ্য দিয়ে জানায় সে কোথায় আছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই তরুণীর মোবাইল ফোনের লোকেশন পাওয়া গেছে বিহারে। এরপর থেকে বন্ধ ছিল মোবাইল। পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাহুলকে গ্রেফতার করে।
সংবাদ সংস্থাকে এই সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে সিআইডি অফিসার জানান, মেয়েটি এই সম্পূর্ন ঘটনার পরে নিজের স্বাভাবিকতা হারিয়েছে, কিছু বলতে পারছে না। একমাস সে কিছু কথা বলতে পারেনি। তাকে কয়েকবার কাউন্সেলিং করানো হয়েছে। এখন মেয়েটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
আদালত সব অভিযুক্তকে শাস্তি দিয়েছে
এ ঘটনায় এক নারীসহ ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তাদের মধ্যে মেয়েটির ‘বয়ফ্রেন্ড’ রাহুলও ছিল। এই অভিযুক্তদের বিহার, ইউপি এবং উত্তরাখণ্ড থেকে সিআইডি গ্রেফতার করেছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পকসো আদালত সম্প্রতি এই মামলায় চার দোষীকে ২০ বছরের সাজা দিয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এখন মেয়েটির বয়স ২২ বছর। সম্প্রতি দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। মেয়েটির বাবা শাড়ির দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের মেয়ে পেয়েছি। অপরাধীরা শাস্তি পেয়েছে। তাই আমরা নতুন জীবন শুরু করতে চাই।