একটি পরিবার ঋণের গোলকধাঁধায় এতটাই জর্জরিত হয়ে পড়েছিল যে কঠোর পরিশ্রম করেও ঋণ শোধ করে উঠতে পারেনি। এই কারণে পরিবারের ৫ সদস্য নিজেদের প্রাণই দিয়ে দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনই মর্মান্তিক খবর সামনে এসেছে বিহারের সমষ্টিপুর জেলার বিদ্যাপতি নগর থেকে। প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঋণ দিয়েছেন যারা সেই মহাজনদের হুমকি-ধামকিতে বিরক্ত হয়েই একত্রে জীবন শেষ করেছে এই পরিবার।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, বড় মেয়ে কাজলের বিয়ের জন্য ৫ বছর আগে গ্রামের মহাজন মন্নু ঝা এর কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন মনোজ ঝা। ধীরে ধীরে এই পরিবারটি ঋণের গোলকধাঁধায় জড়িয়ে পড়ে। তারপর আরো কিছু মহাজনের থেকে টাকা ধার নেন তিনি। মহাজন অনিল সিং এর কাছ থেকে এক লাখ, বাচ্চা সিং -এর কাছ থেকে দুই লাখ, এছাড়া আরো কিছু মহাজনের থেকে আরো দুই লাখ টাকা ধার করেন।
পাঁচ বছর পর, একজন মহাজন ৩ লাখ টাকা ঋণের পরিবর্তে সুদসহ ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন। এতে অস্থির হয়ে মনোজ ঝা ফিনান্স-এ গাড়ি নিয়ে চালাতে শুরু করেন। যাতে এটি থেকে আয় করে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু ভাগ্যের লিখন ছিল ভিন্ন। লক ডাউন চলাকালীন, গাড়ি থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিনান্স কোম্পানি গাড়িটি নিয়ে যায়। এরপর মনোজ একটা ছোট খৈনির দোকান খুলে, তাতেই কোনওরকমে সংসার চলছিল।
কিছুদিন আগে ধারের টাকার তাগদা দিতে এসে মনোজ ঝা-এর সঙ্গে মহাজন অশালীন আচরণ করে এবং ঋণ পরিশোধ না করার জন্য মেয়েকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। এই ভয়ে মৃত মনোজ ৩ মাস আগে তার যুবতী মেয়েকে মন্দিরে বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু ঋণদাতাদের চাপ বাড়তেই থাকে।
ঋণ পরিশোধ না করায় মহাজনরা মনোজ ঝাকে অপমান করতে থাকে। অবশেষে ঋণের এই গোলকধাঁধায় আটকে পড়ে জর্জরিত পরিবারের ৫ সদস্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়। সকালবেলা বাড়ী থেকে তাদের সকলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। একটি ঘরেই সকলে মিলে ফাঁস লাগিয়েছিল। বিদ্যাপতিনগর থানার পুলিশ মৌ ধনেশপুর দক্ষিণের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোজ ঝা (বয়স ৪২ বছর), তাঁর স্ত্রী সুন্দর মণি দেবী (৩৮ বছর), মা সীতা দেবী (৬৫ বছর), ছেলে সত্যম (১০ বছর) এবং শিবমের (৭ বছর) দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্ত শেষে ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে।
আত্মহত্যা নাকি খুন? রহস্য উদঘাটনে তৎপর পুলিশ
জেলার বিদ্যাপতি নগরের মৌ ধনেশপুর দক্ষিণ গ্রামের মর্মান্তিক ঘটনা সবাইকে চিন্তিত করে তুলেছে। একদিকে মানুষ আর্থিক অনটনের কারণে আত্মহত্যার কথা বলছে, অন্যদিকে মহাজনদের চাপে হত্যার অভিযোগ এনেছেন নিহতের দুই মেয়ে। এই অভিযোগের পর, আত্মহত্যা ও খুন দুই দিকই খতিয়ে দেখছে সমস্তিপুরের পুলিশ।