সদ্য পৃথিবীর আলো দেখেছিল ফুটফুটে প্রানটি। আর সেই সদ্যজাত নার্সের হাত ফস্কে পড়ে গেল মাটিতে। তার কচি মাথা সজোরে গিয়ে পড়ে হাসপাতালের মেঝেতে। পরিণতি হলো মর্মান্তিক। নিভে গেল তার জীবনের দীপ। স্তব্ধ করে দেওয়ার মতন এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের এক প্রাইভেট হাসপাতালে। কিন্তু এরপর যা হয় তা হয়তো আরও ঘৃণ্য। দোষী স্টাফরা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে যা করল তাই নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবারের লোকজন। ঘটনা নিয়ে জোর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
লখনউয়ের চিনহাটের মালহৌর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্টাফ নার্সের হাত থেকে পিছলে মেঝেতে পড়ে এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ মাথায় আঘাত বলা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দেবার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি অভিযুক্ত নার্স ও কর্মীরা। সম্প্রতি পুলিশ নার্স ও হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ঘটনাটি ১৯ শে এপ্রিলের, তবে মঙ্গলবার গভীর রাতে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী এ সম্পর্কে তথ্য পেলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
তদন্তকারী অফিসার অভিষেক পান্ডে বুধবার জানিয়েছেন যে হাসপাতালের সুপারিশে ঘটনার দিন শিশুটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “২০ এপ্রিল পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা গেছে মাথায় আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে।” এডিসিপি (পূর্বাঞ্চল) কাসিম আবিদি শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলে, অবহেলার কারণেই এই মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন এবং স্বেচ্ছায় আঘাত করার একটি মামলা ২৪ শে এপ্রিল দায়ের করে তদন্তে নামে। যার মধ্যে হাসপাতালের নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল বা এর কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মৃত শিশুর বাবা জীবন রাজপুত চিনহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। রাজপুত জানান, ঘটনার পর তার চিকিৎসাধীন স্ত্রী পুনম হতবাক হয়ে যায়। রাজপুত জানান যে তিনি তার স্ত্রীকে ১৯শে এপ্রিল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন কারণ তার প্রসব বেদনা শুরু হয়েছিল। রাতে তার প্রসব হয়। তার অভিযোগ তাকে বলা হয়েছে শিশুটি মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছে।
মৃত শিশুর বাবা জীবন রাজপুত বলেন, ” আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে স্ত্রী জানায় তার স্বাভাবিক প্রসব হয়েছিল এবং প্রসবের পর সে শিশুটিকে জীবিত দেখেও ছিল। আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিলেন যে তিনি একজন নার্সকে দেখেছেন যে কোনও তোয়ালে বা কাপড় ছাড়াই শিশুটিকে তার হাতে নিয়ে যাচ্ছিল এবং শিশুটি তার হাত থেকে পিছলে গেছে। আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত নার্স ও অন্যান্য স্টাফ সদস্যরা তার মুখ চেপে ধরে। তাকে মুখ বন্ধ রাখার হুমকি দেয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।