যুগ যতই এগিয়ে যাক না কেন বর্ণ বৈষম্য এর মতো সামাজিক ব্যাধি এখনো সমাজকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। প্রেম করে বিয়ে। কিন্তু বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক গায়ের রং নিয়ে শুনতে হতো খোঁটা। শ্যাম বর্ণ হওয়া ছিল অপরাধ তাই গৃহবধূর কপালে জুটতো মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। দিন দিন এই সমস্ত সইতে সইতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ওই গৃহবধূ। অবশেষে নিজেকে শেষ করে দেন তিনি। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় পূর্ব বর্ধমানে। গৃহবধূর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয়েছে মহিলার স্বামী ও শ্বশুর কে।
আত্মহননকারী গৃহবধূর নাম সরোজিনী ঘোষ। বয়স বছর ২৩। তার শ্বশুরবাড়ি বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর বড়ধামাস এলাকায়। গত সোমবার শ্বশুরবাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় তার প্রাণহীন দেহ।
সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরের সরোজিনী প্রেম করে বছর চারেক আগে বিয়ে করেন পূর্বস্থলী থানার বড়ধামাস গ্রামের বাসিন্দা দেবার্ঘ ঘোষ কে। দম্পতির বর্তমানে একটি আড়াই বছরের শিশু কন্যাও রয়েছে। অভিযোগ, সরোজিনীর গায়ের রং চাপা বলে বিয়ের পর থেকেই প্রতিপদে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে অপমান করত। শুধু হেয় করা নয় শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো ওই গৃহবধূকে।
অভিযোগ চার বছর ধরে দিনরাত গঞ্জনা সহ্য করতে করতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই বধু গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই তার বাপের বাড়ির লোকজন পূর্বস্থলী থানায় গিয়ে শ্বশুরবাড়ির পরিজনদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বধূ নির্যাতন এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করে সরোজিনী ঘোষের স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর অভিযুক্তদের নাম দেবার্ঘ ঘোষ ও বাবলু ঘোষ। মঙ্গলবার অভিযুক্ত দুইজনকে কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়।
বধুর পিতা স্বপন মন্ডল জানান তার মেয়েকে বিয়ের পর থেকেই সহ্য করতে হতো গঞ্জনা। ইদানিং অত্যাচারের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গেছিল যে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে ভদ্রেশ্বরে চলে গেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন আগে শ্বশুর এসে সরোজিনী কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান। এর কয়েক দিনের মাথায় এমন ঘটনা। মেয়েটির পরিবার সূত্রে খবর ফেসবুক থেকে পরিচয় তারপরে প্রেম অতঃপর বিয়ে। কিন্তু ভালোবেসে বিয়ে করলেও রোজই শুনতে হতো গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ। অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে শেষ অব্দি চূড়ান্ত পথ বেছে নিলেন ওই বধূ। তাই বাবার দাবি যারা মেয়েকে এত কষ্ট দিয়েছে তাদের চূড়ান্ত শাস্তি হোক।