চীনে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বিশেষত চীনের অর্থনৈতিক রাজধানী সাংহাই পুরোপুরি বিপর্যস্ত। পরিস্থিতি এমন যে জনরোষের মুখে চীনের প্রশাসন।
ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (NHC) অনুসারে, শুক্রবার, চীনে নতুন করে কোভিড ১৯-এ সংক্রামিত প্রায় ৩৪৭২ জনের খোঁজ মিলেছে যার মধ্যে ৩,২০০ জনই সাংহাই এর বাসিন্দা। চীনে এই করোনা ঢেউয়ে এই পর্যন্ত উপসর্গ ছাড়াই কোভিড রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৭৮২ জন রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে চীনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইতে স্থানীয় সংক্রমণের কারণেউপসর্গ ছাড়াই কোভিড রোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৭২ জন রেকর্ড করা হয়েছে। চীনের সর্বাধিক করোনা সংক্রমনে বিপর্যস্ত সাংহাই এদিকে দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের মধ্যে ছিল। এদিকে সাংহাইতে চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকা এক বয়স্ক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় জনরোষ দেখা দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় বিলম্ব না করার জন্য হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য ইতিমধ্যে সেই শহরে কয়েক দফা টেস্টের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ২৮,৭৭৮ জন কে স্বাস্থ্য নজরদারি থেকে মুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৯ সালে, চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল। পরবর্তীতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সারা বিশ্বে মহামারীর রূপ নেয়। কিন্তু চিন সেই ভাবে প্রভাবিত হয়নি। এখন আবার সেই দেশেই করোনা ভাইরাস দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে যখন বাকি বিশ্ব ভাইরাসটিকে প্রায় নিয়ন্ত্রণ করেছে।
মৃত্যু আড়াল করছে চীন সরকার?
কিছু মিডিয়া রিপোর্টস বলছে শুক্রবার সাংহাইয়ের একটি হাসপাতালে কয়েক ডজন বয়স্ক রোগী কোভিড ১৯-এ মারা গেছেন। তবে সরকারী পরিসংখ্যান দাবি করেছে যে ২০২০ সাল থেকে শহরে করোনা আক্রান্ত হয়ে কোনও মৃত্যু হয়নি। ভাইরাসের এই নতুন ঢেউ ঠেকানোর প্রয়াস হিসেবে সরকার সাংহাইতে কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে। শহরের প্রায় ২৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার বেশিরভাগকেই তিন সপ্তাহের জন্য ঘরের ভিতরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাংহাইয়ের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হতে শুরু করেছে যে সরকারী চীনা মিডিয়াও জনগণের অসন্তোষ তুলে ধরতে শুরু করেছে। শুক্রবার অফিসিয়াল গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সাংহাই শহর করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। বলা হচ্ছে ওমিক্রণের সাব ভ্যারিয়েন্ট XE -এর কারণে এই সংক্রমনের বাড়বাড়ন্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ে সন্দেহ, উদ্বেগ এবং ক্লান্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। যেকোনো উত্তেজনাময় ঘটনার গল্পই এই সময় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ জাগিয়ে তুলতে যথেষ্ট। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্টারনেটে জনরোষের সুনামি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সাংহাইয়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ খাবারের ঘাটতি অনুভব করছে। মহামারী এবং লকডাউন সম্পর্কিত দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে ভুগছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, সাংহাইয়ের বয়স্ক জনগোষ্ঠী মহামারী দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। সাংহাই হল চীনের অন্যতম শহর যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অনির্দিষ্টকালের লকডাউনের সময় এই গোষ্ঠীটি আরও বেশি প্রভাবিত হয়েছিল কারণ বেশিরভাগ লোকই বয়স সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছে। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বৃহস্পতিবার হাইনান প্রদেশে তার সফর চলাকালীন বলেছেন যে বিশ্বব্যাপী কোভিড -১৯ মহামারীর পরিস্থিতি এখনও গুরুতর, আমাদের কখনই ধৈর্য্য হারানো উচিত নয়। অধ্যবসায়ের সাথেই বিজয় আসে।