বলা হয়, মুম্বাইয়ে ভিক্ষুকদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক কাজ করে। যার সাথে হাজার হাজার ভিক্ষুক জড়িত এবং তাদের এই ভিক্ষার ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার কোটি কোটি টাকা। এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত প্রচুর প্রতিবন্ধী শিশু এবং বিপুল সংখ্যক বৃদ্ধও। মুম্বাইতে ভিখারীর সিন্ডিকেট কাজ করে। কিন্তু এবারে বিহারের সীমাঞ্চলে এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে রমজান উপলক্ষে ভাড়া করা ভিক্ষুকদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের দিয়ে ভিক্ষা করানো হচ্ছে এবং সেই ভিক্ষার টাকার একটা বড় অংশ পৌঁছে যাচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির নেটওয়ার্ক যারা চালায় সেই মাফিয়াদের কাছে। এক প্রতিবন্ধীকে মসজিদের সামনে বসে ভিক্ষা করতে বাধ্য করার ঘটনা সামনে এসেছে।
জানা গেছে, দেড় মাস আগে কাটিহারের মনিহারী থেকে এক প্রতিবন্ধী শিশু গুলশান নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও কোথাও তার সন্ধান পায়নি। এরপর মণিহারী থানায় শিশুটির ব্যাপারে তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে পরিবার জানতে পারে কাটিহারে রাস্তায় ভিক্ষা করছে তাদের সন্তান। এ তথ্যের পর পরিবারটি ওই শিশু গুলশানের খোঁজে কাটিহারে পৌঁছায়। ফিরে পাওয়ার পর গুলশান পরিবারের সদস্যদের তার যে অভিজ্ঞতা জানালেন তা চাঞ্চল্যকর।
গুলশান তার পরিবারকে জানায় যে তাকে মণিহারী থেকে তাঁকে ভুল বুঝিয়ে একজন লোক ধরে এনেছিল, সে বহু বছর ধরে ভিক্ষুকদের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত এবং নিজেও ভিক্ষা করে। গুলশান জানান, প্রথমে এখানে এনে তিনি গুলশান কে ভিক্ষাবৃত্তির প্রশিক্ষণে পাঠান। এরপর তাকে প্রতিদিন ভিক্ষা করে হাজার থেকে পনেরশ টাকা আনতে বলা হয়। এই টাকা সংগ্রহ করতেন ওই ব্যাক্তি। এরপর এর একটা বড় অংশের ভাগ নিয়ে নেয় সিন্ডিকেটের লোকজন। এর সঙ্গে বহু লোক জড়িত বলেও বয়ান দিয়েছে গুলশান। যারা শিশুদের কিডন্যাপ করে ভিক্ষা করতে নিয়ে আসে। গুলশান বলেন, এই চক্রের নেপথ্যে বড় বড় নাম জড়িত, যারা ভিক্ষুকদের সাথে যোগাযোগ রাখে এবং সমস্ত টাকার হিসাব রাখে।
কাটিহারের হাজীপুর এলাকার নাম নিয়ে গুলশান বলেন, ভিক্ষার জন্য শিশু ও বৃদ্ধদের জোর করে সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে রেখেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে তাদের পরিবারের শিশুর মুখে এই ঘটনার কথা শুনে ক্রুদ্ধ পরিবারের লোকজন। তারা অবিলম্বে পুলিশের কাছে বিচার দাবি করছেন। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে আর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলছেন, এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে মনিহারির ডিএসপি মনোজ কুমার বলেন, এই সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। শিগগিরই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।