মর্মান্তিক ঘটনা শিলিগুড়ির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ নগরে। দুই বান্ধবীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য! একই ঘরের সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দু’টি দেহ।
জানা গেছে অল্প বয়স থেকেই বন্ধুত্ব ছিল দু’জনের। সম্পর্কটা বেশ গভীর ছিল দুই বান্ধবী প্রিয়াঙ্কা রায় ও দীপ্তি রায়ের৷ দুজনের বন্ধুত্বের গভীরতা এতটাই বেশি ছিল যে একে অন্যের থেকে আলাদা হওয়ার কথা মানতেই পারেনি তারা৷ এক বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর শুনে আর একজন একা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিল সম্ভবত। তাই বেছে নিয়েছে চরম পথ। সূত্রের খবর, সম্প্রতিই দিপ্তী রায়ের বিয়ে ঠিক হয়। মেয়েটির পরিবারে তার বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল জোরকদমে। আজ বিকেলে পরিবারের সদস্যরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। সেই সময় একটাই ওড়না নিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং থেকে ঝুঁকে আত্মহত্যা করে দুই বান্ধবী।
বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আলাদা হয়ে যেতে হবে, আর এই ভেবেই দুজনের মন ভেঙে যায়। আর তার পরিণতি দেখা গেলো আজ সন্ধ্যে বেলায়। দুই বান্ধবীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। ওই দুজনের মধ্যেই একজনের বাড়ি থেকেই দুজনের দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন ওই এলাকা।
ওই এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা নীলিমা রায় জানান, ‘ওরা দুজনেই খুব ভালো বান্ধবী ছিল এবং একে ওপরের খুব প্রিয় ছিল। একে অপরকে ছাড়া থাকতেও পারতো না ওরা। ওদের মধ্যে একজনের বিয়ের ঠিক হওয়ায় তারা এই ঘটনা ঘটায়। একে ওপরের হাত ধরে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন তারা। ওই ঘটনাস্থল থেকে যে সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে সেখানে লেখা ছিল , ”SORRY, আলাদা করবেন না আমাদের, একসাথে নিয়ে যাবেন, একসাথে রাখবেন, একসাথে করবেন আমাদের সব কাজ”। সেই নোটে তাদের আলাদা হওয়ার কথাও লেখা। পরিবারের থেকে তারা ক্ষমাও চেয়েছেন, তারা দুজনেই মা বাবার স্বপ্ন পূরণ না করতে পারার কথাও জানিয়েছে, কিন্তু তারা অর্থাৎ দীপ্তি এবং প্রিয়াঙ্কা কেউই একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবেনা।
সেদিন রাতেই পুলিশ দুজনের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মর্গে পাঠিয়েছে। গোটা ঘটনায় ভক্তিনগর থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। রজত রায় দীপ্তির ঠাকুরদা জানান, তিনি তার নাতনির বিয়ে ঠিক করেছিলেন দিন ছিল আগামী ৭ই বৈশাখ। তিনি বলেন “নাতনিকে জিজ্ঞেস করে যাই আশীর্বাদ করতে যাওয়ার দিনও যে তার সেই ছেলে পছন্দ কি না, কোন আপত্তি করেনি সে , সব আয়োজন শেষ বিয়ের, সন্ধ্যে বেলা জানলাম ওরা দুজনে আত্মহত্যা করেছে, কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না।”
দুই বান্ধবীর বাড়িতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও অবাক হয়ে গেছেন। তারা যেন কোনও ভাবেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না। পুলিশ তদন্তের জন্য দুই পরিবারের সাথে কথাও বলছে।