সদ্য জন্মেছে সন্তান। হাসপাতালে ভর্তি প্রসূতি মা। সাথে ছিল পরিজন। হঠাৎই নার্স এসে বলে কিছু ওষুধ কিনে আনতে হবে। আর সেটা দ্রুত করতে হবে। তখনকার মতন নার্সের হাতেই বাচ্চাকে দিয়ে ওষুধ কিনতে বেরিয়ে যায় প্রসূতির পরিজন। কিন্তু ফিরে এসেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। কোথায় নার্স, যার কোলে সদ্যোজাতকে দিয়ে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। রাত কেটে সকাল হলো তাও দেখা মিলল না নার্সের। এরপরই হাসপাতালে কর্মীদের কাছে খোঁজ করতে গিয়ে চোখ ছানাবড়া। জানা গেল এমন কোন নার্স সেই সময় ডিউটিতে ছিলেনই না। কেউ বা কারা অপহরণ করে নিয়েছে শিশুটিকে।
ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটক রাজ্যে। কর্ণাটকের হাসন জেলার একটি সরকারি হাসপাতালের নার্স পরিচয় দিয়ে এক নবজাতক শিশুকে অপহরণ করেছে শিশু চোরেরা। গত ১৪ই মার্চ মধ্যরাতে আরাকলাগুডু সরকারি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই বিষয়ে একটি অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং শিশুটির মায়ের বক্তব্যও রেকর্ড করা হয়েছে, যিনি আসামের বাসিন্দা এবং পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। পুলিশ এসে ওই সরকারি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতেই ধরা পড়ে আসল বিষয়টা। নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে পুলিশের হাতে।
পুলিশ জানিয়েছে, নার্সের ছদ্মবেশে হাসপাতালের পিছনের দরজা দিয়ে শিশু-অপহরণ চক্রের সাথে যুক্তরা প্রবেশ করে। অবিকল নার্সের ইউনিফর্ম পরে থাকায় কেউ তাকে প্রশ্ন করেনি। তবে শিশু ছিনতাইকারীদের কার্যকলাপ সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং পুলিশ নানা সূত্র ধরে কাজ করেছে। এই বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ দীপক আরকালগুডু থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় আসামের ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রসব বেদনার পর তিনি একটি সন্তানের জন্ম দেন। শিশু চোর সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালে প্রবেশ করে এবং গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষার পর সুযোগ বুঝেই এ অপরাধ ঘটায়। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করার তিনদিনের মধ্যেই অবশ্য ধরা পড়ে অভিযুক্তরা।
পুলিশে তদন্তে নেমে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয় যে, অভিযুক্ত হাসপাতালের কোনো কর্মী নন। এরপরই শিশু চোরের খোঁজে পুলিশের তল্লাশি অভিযান শুরু করা হয়। তিনদিনের মধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি জেরায় অভিযুক্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে এবং জানিয়েছে তার পরিবারের ৬ জন এই অপরাধে যুক্ত ছিল। তার মেয়ের নিঃসন্তান এবং তাকেই তিনি সেই বাচ্চাটি দিয়েছিলেন। অভিযুক্ত মহিলা আরো জানিয়েছেন সন্তান না থাকায় তার মেয়ের পরিবার ভাঙতে বসেছিল। তাই তিনি এই কাজ করেছেন। পুলিশ তাকে নিজের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করে দেখছে।