বছর ১৫ আগে তার প্রথম স্ত্রীয়ের মৃত্যু হয়। এরপর মোট বিয়ে করেছিলেন ১০ জনকে । কিন্তু তার এই ১০জন স্ত্রী প্রত্যেকেই মানসিক ভরসাম্যহীন। আরও অবাক করা ব্যাপার হল এই ১০জন স্ত্রীয়ের মধ্যে ৯ জনই তাকে রেখে নিখোঁজ হয়ে যান। শেষে প্রায় এক বছর আগে বছর ৩৫ এর জান্নাত বেগম নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাঁর মধ্যে এই নব্য বিবাহিত জান্নাতকে বিয়ে করার পর থেকেই হারানোর শঙ্কা জাগে। আর তার স্ত্রী যাতে আগের স্ত্রীদের মতো হারিয়ে না যান তাই মোটা এক দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন নিজের সাথে।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের ধারকপুর গ্রামের বাসিন্দা নুর ইসলামের (৭৫) জীবন কথা এটি। নূর ইসলামের ভিক্ষা করে দিন কাটে। তিনি ভিক্ষা করার সুবাদে অনেক গ্রামে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু এই ভিক্ষা করার সময় সাথে করে তার এই নতুন বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে যান। এমনকি ঘরের কাজের সময়ও জান্নাত নামের এই মহিলা নূরের সাথে দড়ি দিয়েই বাধা থাকেন। নূর ইসলাম তার স্ত্রীকে হারাতে এতো ভয় পান যে তিনি তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন নিজের সাথেই ঘুমানোর সময়ও।
আলোচনা–সমালোচনা চলছে নুর ইসলামের এমন অদ্ভুত আচরণ নিয়ে। নুর ইসলামকে তার স্ত্রীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার কারণ জানতে চাইলে বলেন, একে একে ১০টি বিয়ে করার পরও কেউ তাঁর সঙ্গে নেই বৃদ্ধ বয়সে। একা থাকতে চান না বৃদ্ধ বয়সে। মানসিক ভারসাম্যহীন ১১তম স্ত্রীও। আগের স্ত্রীদের মতো যেকোনো সময় নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে পারেন, এমন শঙ্কা থেকেই স্ত্রী জান্নাতকে দড়ি দিয়ে বেঁধে সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও একাধিক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাজেরা খাতুন নুর ইসলামের প্রথম স্ত্রী ছিলেন। ১৫ বছর আগে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল নুর ইসলাম ও হাজেরা দম্পতির। মেয়েকে বিয়ে দেন নুর ইসলাম হাজেরার মৃত্যুর পর। ছেলেও মারা যান কয়েক বছর আগে।
নুর ইসলাম পথে পথে ঘুরে ভিক্ষা শুরু করেন প্রথম স্ত্রী হাজেরা মারা যাওয়ার পর। নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো নারী পেলেই বাড়ি নিয়ে আসতেন। আনার পর তাঁদের বিয়ে দিতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু কিছুদিন পরই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন মানসিক ভারসাম্যহীন। এভাবে আনুমানিক এক বছর আগে ফুলপুর–ময়মনসিংহ মহাসড়কের আমুয়াকান্দা এলাকায় জান্নাত বেগমের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় তার নয়জন স্ত্রী নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর। পরে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান জান্নাতকেও।
ভাইটকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, নুর ইসলাম নিজেও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যান প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই। এরপর নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন নারীদের নিয়ে আসতেন নিজের বাড়িতে। স্থানীয় মানুষ বিয়ে করিয়ে দিতেন এক বাড়িতে বসবাস করা অশোভন বলে। কিন্তু তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন আগের ৯ স্ত্রী। তাই তিনি সঙ্গে নিয়েই ঘোরেন বর্তমান স্ত্রীকে।