মানুষ কিভাবে হয়ে উঠতে পারে এতটা নৃশংস? জলপাইগুড়ি থেকে সামনে আসা এক ঘটনা সকলের মনে তুলছে এই প্রশ্নই। এখানে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে অমানুষিক অত্যাচার করা হলো বাড়ির পরিচারিকাকে। জানা গেছে সে চুরি করেছে এই অপবাদ দিয়ে তার সারা শরীরে ফোটানো হয়েছে একের পর এক সূঁচ। শুধু এই নয় বয়স্ক পরিচারিকাকে মারধর করা হয়েছে লোহার রড দিয়ে। তার উপর এতটাই নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়েছে যে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। খবরটি প্রকাশিত হয়েছে টিভি9 বাংলায়।
সূত্র অনুযায়ী বয়স্ক মহিলা পরিচারিকার নাম মনোবালা রায়। তিনি গত চোদ্দ বছর ধরে জলপাইগুড়ি মণ্ডল ঘাট এলাকার একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। ওই বাড়ির গৃহকর্তা অবসর প্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মী, নাম বিশারু ঘোষ। এতদিন কাজ করার পরও বৃহস্পতিবার হঠাৎই সেই বাড়ীর সদস্যরা অভিযোগ তোলে বৃদ্ধ নাকি তাদের তাদের তারাপীঠের একটি আংটি চুরি করেছেন। এই অভিযোগই তাদের কাছে যথেষ্ট ছিল। অভিযোগের সত্যতা কতখানি, আদৌ ওই বৃদ্ধা চুরি করেছেন কিনা এইসব না জেনেই তার ওপর চড়াও হন তারা।
প্রথমে লোহার রড দিয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে মারা হয় তাঁকে। অভিযোগ ওই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী বিশারু ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রীই বৃদ্ধাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মেরেছেন। তারপর তাঁর সারা শরীরে ফোটানো হয় একের পর এক সূঁচ। এই অত্যাচারের পর বিশারু ঘোষের বাড়িতেই ছিলেন ওই বৃদ্ধা। শুক্রবারদিন মনোবালা দেবীর পরিবারের লোকজনের কাছে এই খবর পৌঁছলে তারা এসে মনোবালা দেবীকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। রবিবার রাতে নির্যাতনের কারণে ব্যথায় মারাত্মক কষ্ট পেলে তাঁকে ভর্তি করা হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু এই সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী বিশারু ঘোষ।
বৃদ্ধা জানান, “আমায় পাঁচটার সময় ডাকল। আমি যেতেই একের পর এক সূঁচ ফুটিয়ে দিল আমার গায়ে। মেঝেতে ফেলে মারল। বলল আংটি চুরি করেছি আমি। অথচ সেই আংটি আমি দেখিনি। আমার চোখে, গালে মারধর করেছে। অসহ্য যন্ত্রণা হয়েছে। পরে বাড়ির লোকেরা আমায় হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেছে।” এদিকে অভিযুক্ত বিশারু ঘোষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি ওনাকে ডাকিনি। আংটি খোয়া যাওয়ার পর আরেকজন কে ডেকেছিলাম। খুজেঁ না পেয়ে আর কিছু জানাইনি। তারপর সন্ধে নাগাদ ওই বৃদ্ধা নিজেই আমার বাড়িতে আসেন। আমি ওনাকে কিছুই বলিনি। কারণ আমি ওনাকে দেখিনি আংটি চুরি করতে। আমি আইন জানা মানুষ। আইন-কানুন জানি।”
জলপাইগুড়ি থানার সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তে নেমেছে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ।