নারীদের অন্তরঙ্গ ছবি একটি অ্যাপে শেয়ার করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। সামাজিক মিডিয়া অ্যাপ টেলিগ্রামে ব্যাপকভাবে সেই ছবি শেয়ার করা হচ্ছে। বিবিসি এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই সত্য।
বাকি পাঁচটা মেয়ের মতোই চলছিল সারার জীবন। কিন্তু একদিন টেলিগ্রামে তার নগ্ন ছবি দেখা মাত্রই সারার যেন পায়ের তলার মাটি সরে গেল। তার ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি তার ফোন নম্বরও শেয়ার করা হয়েছে টেলিগ্রামে। যার কারণে হঠাৎ করেই তাকে অজানা লোকের কাছ থেকে অনেক ফোন আসতে শুরু করে এবং তারা সবাই সারার কাছে তার আরও এরকম অশ্লীল ছবি চাইতে থাকে।
সারা নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে জানান “আমার কাছে যাদের মেসেজ আসছিল তারা আমাকে একজন প্রস্টিটিউট এর নজরে দেখছিল। কেননা তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে আমি নিজের অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করেছি মানে আমি একজন পতিতা নারী” সে বলে৷ নারী হিসেবে আমার কোনো মূল্যই নেই।
সারা (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছে সে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি শেয়ার করেছিল। কিন্তু ছবিটি কিভাবে টেলিগ্রামে একটি গ্রুপে ১৮,০০০ মেম্বারের কাছে পৌঁছে গেল সে জানেনা। যাদের সাথে ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই হাভানা, কিউবার প্রতিবেশী ছিল।
মহিলা আরো বলেন “আমি বাইরে যেতে চাইনি, আমি আমার বন্ধুদের সাথে কোনও যোগাযোগ করতে চাইনি। সত্যি বলতে মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম।”
কিন্তু সারা একা নয়। অনেকটা সময় নিয়ে টেলিগ্রাম অ্যাপ এর বিষয়ে তদন্তের পর, বিবিসির সামনে উঠে এসেছে অন্তত ২০টি দেশের বড় কমিউনিটি এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল যারা হাজার হাজার গোপনে তোলা ছবি, চুরি করা বা ফাঁস হয়ে যাওয়া মহিলাদের গোপন ছবি শেয়ার করছে৷ এই প্ল্যাটফর্মটি তে এই সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে।
বিবিসি রাশিয়া থেকে ব্রাজিল এবং কেনিয়া থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত ১৮টি টেলিগ্রাম চ্যানেল এবং ২৪টি গ্রুপ পর্যবেক্ষণ করেছে। যার মোট ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এই গ্রুপগুলো তে মহিলাদের ব্যক্তিগত বিবরণ যেমন বাড়ির ঠিকানা এবং পিতামাতার ফোন নম্বর ইত্যাদি গ্রুপগুলিতে ফটোগ্রাফ সহ পোস্ট করা হয়েছিল।
টেলিগ্রাম বিবিসিকে সাক্ষাতকার দিতে অস্বীকার করেছে, কিন্তু তারা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে এই তারা এইসব পাবলিক গ্রুপ এবং চ্যানেল ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করে এবং যে কোনও ব্যবহারকারীর বিষয়বস্তু সম্পর্কে নজর রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু টেলিগ্রাম অ্যাপ এর এই নারীদের গোপনীয়তা ফাঁসের বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে চাপ বাড়াতে পারে। হোয়াটসঅ্যাপ অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করার বিরুদ্ধে নীতি চালু করেছে। এমতাবস্থায় টেলিগ্রাম কতদিন তা উপেক্ষা করে চলবে সেটাই দেখতে হবে।
টেলিগ্রামের ছবিগুলির দ্বারা যাদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে, যাদের জীবন পরিবর্তন হয়েছে, তাদের জন্য সেই পরিবর্তন এখনও অনেক দূরে।