হাতে পায়ে শিকল বাঁধা। এইভাবেই কাটছে তার জীবন। না কোন জন্তু জানোয়ার নয়, বলা হচ্ছে বছর ছাব্বিশের এক তরতাজা যুবকের কথা। তার নাম কৃষ্ণেন্দু। ছয় বছর আগের এক অভিশপ্ত রাতে হঠাৎই সে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তারপর থেকে এইভাবেই দিন গুজরান হচ্ছে তার। কৃষ্ণেন্দুর দিনমজুর পরিবার তার চিকিৎসা করানোর চেষ্টা নিজেদের যথাসর্বস্ব ঢেলে দিয়েছে। তার চিকিৎসার অর্থ যোগাতে একে একে গেছে জমি দোকান সবকিছুই। টাকার অভাবে আর সম্ভব নয় চিকিৎসা। তাই আপাতত শিকল বাঁধা অবস্থায় এক বছর ধরে জীবন অতিবাহিত হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার (South 24 Parganas) কুলপি ব্লকের বড় জামতলার বছর ২৬ এর যুবক কৃষ্ণেন্দু দোলুইয়ের। খবরটি প্রকাশিত হয়েছে নিউজ 18 বাংলার এক প্রতিবেদনে।
মানসিক ভারসাম্যহীন কৃষ্ণেন্দুর মা রুমা দোলুই জানান, ছেলে কৃষ্ণেন্দু ছাড়াও আরো দুই মেয়ে আছে তাঁদের। পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিলেন কৃষ্ণেন্দু৷ তবে দরিদ্র সংসারে ক্লাস এইট এর পর সে আর পড়তে পারেনি। সংসারের হাল ধরতে পড়াশুনা ছেড়ে নলকূপ বসানোর কাজ করতে শুরু করে কৃষ্ণেন্দু। মন্দের ভালো চলছিল একরকম। কিন্তু ছয় বছর আগের এক রাত পাল্টে দেয় সবকিছু। যুবক ও তাঁর পরিবারের জীবনে সব কিছু উলটপালট হয়ে যায়। ২০১৪ সালের সরস্বতী পুজোর রাতে হঠাৎই ঘুমের মধ্যে চিৎকার করেন কৃষ্ণেন্দু।
তার পর থেকে আস্তে আস্তে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বলে জানায় কৃষ্ণেন্দুর বাড়ির লোকজন । বাড়ির একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য বহু চিকিৎসক ও হাসপাতালের দরজায় ঘোরে তার বাবা-মা। চিকিৎসার বিপুল খরচ বহন করতে বিক্রি করে দেয় জমি ও দোকান। কিন্তু এত চেষ্টা সত্ত্বেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো যায়নি কৃষ্ণেন্দুকে।
মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় চার মাস বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণেন্দু। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তাকে খুঁজে আনা হয়। যদি ছেলে কিছুটা ঠিক হয় এই দুরাশায় ছেলের বিয়ে দেয় তাঁর বাবা মা। কিন্তু মানসিক স্থিতি না থাকায় ২ মাস পর চলে যান স্ত্রী। সর্বস্বান্ত পরিবার তাই কোনো উপায় না পেয়েই ছেলেকে ১ বছর ধরে হাতে পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে। এই ভাবেই দিন কাটছে কৃষ্ণেন্দুর।