নিজের মাত্র ৬ বছরের ছেলেকে গলার নলি কেটে খুনের পর আত্মঘাতী হলেন পুরুলিয়ার হোমগার্ড বাবা। মর্মান্তিক এই ঘটনা পুরুলিয়ার (Purulia) বেলগুমা পুলিস লাইনে (Police Line)। সকালবেলা ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার হয়েছে পিতা-পুত্রের প্রাণহীন দেহ। স্ত্রী চম্পাকেও নাকি খুন করতে গিয়েছিলেন হেমন্ত৷ কিন্তু কোনওমতে তিনি পালিয়ে বাঁচেন৷ পুলিস চম্পাকে জেরা করে খুনের ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করছে৷
কেন এমন করলেন ওই ব্যাক্তি! উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে মনের ভেতর সন্দেহ নাকি অত্যাধিক উশৃংখল জীবন যাপনের কারণে অশান্তির জের? পুরুলিয়ায় হোম গার্ড এর আত্মহত্যা ঘিরে দানা বাঁধছে রহস্য। হোমগার্ডের স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সাথে কথা বলে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য পুলিশ এর হাতে। যার সত্যতা তদন্তাধীন।
পুলিশ সূত্র অনুযায়ী, ২০০৮ সালে মাওবাদী পুরুলিয়ার অযোধ্যা স্কোয়াডে ডেপুটি এরিয়া কমান্ডার হিসেবে যোগ দেন আত্মঘাতী হেমন্ত হেমব্রমের এখনকার স্ত্রী চম্পা। মাওবাদীদের সাথে থাকার সময় বিক্রম নামে এক মাও নেতার সাথে নাকি তৈরী হয় চম্পার সম্পর্ক। এর দুবছর পর ২০১০ সালে অযোধ্যা স্কোয়াডে যোগ দিয়েছিলেন হেমন্ত। সেও জড়িয়ে গিয়েছিলেন আরেক মাওবাদী সদস্যা এর সাথে। এমনকি তাঁকে সিঁদুরও পরিয়েছিলেন হেমন্ত। তবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হেমন্ত নাকি ওই তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেন। এরপর ২০১৪ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি হেমন্ত সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। যার কারণে স্পেশ্যাল হোম গার্ডের চাকরিও মেলে।
এর দুবছর আগে ২০১২ সালের ৩০ জুলাই কলকাতায় অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করেন চম্পা। তিনিও পেয়েছিলেন স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি। আস্তে আস্তে সম্পর্কে জড়ায় চম্পা এবং হেমন্ত। ২০১৪ সালেই বিয়ে করেন দু’জনে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানেই হয়েছিল সেই বিয়ে।
এগিয়ে চলে দুজন সংসার জীবন। জন্মায় তাদের সন্তান। কিন্তু তারপর থেকেই তাল কাটে। জানা গেছে হেমন্তের মনে সন্দেহ জাগে ওই সন্তানের বাবা হেমন্ত নন। তা নিয়ে এমনিতেই অতিরিক্ত মেজাজি হেমন্ত ও চম্পার মধ্যে অশান্তি বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে লাগামহীন জীবন বাঁচতে থাকেন হেমন্ত। অভিযোগ, স্ত্রীর উপর শারীরিক অত্যাচারও চালাতে থাকে।
স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি করার সময় হেমন্তের বিরুদ্ধে এসেছিল ইভটিজিংয়ের অভিযোগ। পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনের আবাসনে বাস করলেও টানা ২৫ দিন নাকি চাকরিতে হাজিরাই দেননি সে। তারপরই সোমবার সকালে সামনে এসেছে এমন মর্মান্তিক ঘটনা। সে তাঁর স্ত্রী কে খুনের চেষ্টা করলেও কোনমতে প্রাণে বাঁচে সে। ঠিক কী কারণে নাবালক ছেলে কে মেরে আত্মঘাতী হয় সে, পরিবার পরিজনের সাথে কথা বলে উত্তর খুঁজছে পুলিশ।