করোনা মহামারীর আতঙ্ক গ্রাস করেছে গোটা দুনিয়া কে। যেখানে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যও যথেষ্ট ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনা সংক্রমনের আতঙ্ক মানুষের মধ্যে যেভাবে জেঁকে বসেছে তাতে প্রায়শই সামনে আসছে নানা মর্মান্তিক খবর। ঠিক যেমনটা ঘটে গেল তামিলনাড়ুর (Tamilnadu) মাদুরাই তে। যেখানে ফের করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস জনিত মহামারীর বাড়বাড়ন্ত দেখে সংক্রমিত হতে পারেন এমন আতঙ্ক থেকে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যই বিষপান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
জানা গেছে, করোনার ভয়ে যে পরিবারের মোট ৫ জন বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তার মধ্যে ৩ জনের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা গেছে পরিবারের এক মহিলা ও শিশুপুত্র। মহিলার শিশুপুত্রের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর এবং মহিলার বয়স আনুমানিক ২৩ বছর। ভাগ্যক্রমে যারা বেঁচে গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে ওই মহিলার ভাই ও মা ও আরও একজন। তামিলনাড়ু পুলিশ জানিয়েছে ৩ জনের প্রাণ বাঁচাতে পারা গেছে।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মৃত মহিলার নাম জোতিকা। সে তার স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। ইদানিং মা লক্ষ্মীর সঙ্গে থাকতেন।
জোতিকার বাবা নাগরাজ গত বছর ডিসেম্বরে মারা যান। এরপর থেকে পুরো পরিবার আর্থিক সমস্যার মুখে ছিল। জানা গেছে, ৮ই জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হন জোতিকা। এই বিষয়টি তিনি তার মাকে জানালে তিনি ভীষণ ভয় পেয়ে যান যে করোনা সংক্রমণের মুখে পড়বে গোটা পরিবার। এরপর পরিবারের সবাই বিষ পান করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরদিন প্রতিবেশীরা বিষয়টি জানতে পারলে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ দ্রুত বিষপানে অসুস্থ সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু জোতিকা ও তার ছেলেকে বাঁচানো যায়নি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্ত চলছে। পুলিশ আধিকারিক এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, পরিবারশুদ্ধ সকলে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয়েই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে অনুমান। এমন ঘটনা ঘিরে ওই এলাকায় যাতে উত্তেজনা তৈরি না হয়, সেই বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারী হানা দেওয়ার পর থেকেই গত দুই বছরে নানা এমন ঘটনা সামনে এসেছে প্রায় গোটা পৃথিবী থেকে। করোনা সংক্রমিত হলে মৃত্যু অনিবার্য এই ভয় থেকে টানা ১৫ মাস ঘরে নিজেদের বন্দি করে রেখেছিলেন একই পরিবারের তিন মহিলা এমন ঘটনাও সামনে এসেছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার কাণ্ডালি গ্রামের সেই ঘটনায় ওই তিন মহিলা এইভাবে ঘরবন্দি থাকার ফলে শিকার হয়েছিলেন চরম অপুষ্টির। বলা যায় প্রায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেছিল প্রশাসন। আবার ওমিক্রনের ত্রাস বাড়ার পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক মা নিজের কোভিড পজিটিভ ১৩ বছরের সন্তানকে সংক্রমনের ভয় তালা বন্ধ করে রাখলেন গাড়ির ডিকিতে। এই সব নানা ঘটনা ঘিরে এখন একটাই প্রশ্ন? মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে না তো?