প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঠাকুমা! তাই পথের কাঁটা সরাতে ঠাকুমাকে খুন করাতেও পিছুপা হল না কিশোরী নাতনি! ঘটনাটি চাপা দিতে ঠাকুমার মৃত্যুর নানান গল্পও ফাঁদে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকে। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশের জাল থেকে রেহাই পেল না ১৫ বছরের ওই নাতনি। তার প্রেমিক ও বন্ধুকেও গ্রেফতার করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সুনীতা দেবনাথ (৬০)। বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের পণ্ডিতপুর এলাকার বাসিন্দা সুনীতা দেবনাথকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছে। তাঁর কিশোরী নাতনিই প্রেমিক জয়ন্ত বর্মন ও তার বন্ধু মানিক বর্মনকে সঙ্গে নিয়ে সুনীতা দেবনাথকে ধারাল অস্ত্রের কোপ মারে বলে অভিযোগ। পুলিশি জেরায় ঠাকুমাকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে নাতনি। ডিএসপি সদর সোমনাথ ঝা বলেন, এক বৃদ্ধার খুনের ঘটনায় তার নাবালিকা নাতনি ও দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত যুবকদের আদালতের মাধ্যমে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নাবালিকাকে পুলিশ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুনীতা দেবনাথের ছেলে ও পুত্রবধূ কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। নাতনিকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে একাকী থাকতেন সুনীতা দেবনাথ। ১৫ বছর বয়স হতে না হতেই তাঁর নাতনি একাধিক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে বলে খবর। একবার বাড়ি থেকে পালিয়েও গিয়েছিল সে। যা কোনভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না ঠাকুমা। নাতনিকে সাবধান করেও সুরাহা হয়নি। বরং ঠাকুমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠত কিশোরী। এরপর তার রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল গত ২৬ নভেম্বর। সেই রাতে ঠাকুমা ঘুমিয়ে পড়ার পর বাড়িতে আসে কিশোরীর প্রেমিক জয়ন্ত বর্মন ও বন্ধু মানিক বর্মন৷ হঠাৎ করে ঠাকুমার ঘুম ভেঙে গেলে নাতনিকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন তিনি, জানা গিয়েছে এমনটাই। সেই সময় জয়ন্ত সুনীতাদেবীর পেটে আঘাত করে বলে অভিযোগ। এরপর সুনীতাদেবী আর্ত চিৎকার শুরু করলে পালিয়ে যায় জয়ন্ত ও মানিক। প্রতিবেশীরা হাজির হলে তাঁদের সামনে ঘটনার নাটকীয় রূপ দেয় ওই নাবালিকা। প্রতিবেশীরা সুনীতাদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু, তিনদিন পরই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এতক্ষণ প্রকৃত ঘটনা গোপন থাকলেও বৃদ্ধার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে হাসপাতালের তরফে পুলিশকে জানানো হয়। এরপরই পুলিশের সন্দেহে পড়ে নাতনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, সুনীতা দেবনাথের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাঁর নাতনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশকে ভুলপথে চালিত করে। কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাতে ঠাকুমার সঙ্গে ঘটা যাবতীয় বিষয় স্বীকার করে নাবালিকা। এরপর রাতেই ওই নাবালিকা সহ পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে জয়ন্ত ও বন্ধু মানিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের বালুরঘাট আদালতে তোলা হয়।