সুরক্ষিত যৌনমিলন এবং AIDS প্রতিরোধে কনডম (Condom) ব্যবহারের বিষয়ে বারবার সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের পুরুষদের মধ্যে কনডম ব্যবহার নিয়ে যে তথ্য সামনে উঠে এলো তা যথেষ্ট আশ্চর্য করার মতন। পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে কন্ডোমের ব্যবহার করেন মাত্র ১ পুরুষ । অর্থাৎ মাত্র ৯.৫ শতাংশ পুরুষ যৌন মিলনের সময় কন্ডোমের ব্যবহার করেন। গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় তুলনায় শহরে বসবাসকারী পুরুষদের মধ্যে কন্ডোমের ব্যবহার করার প্রবণতা বেশি থাকলেও অনীহার ছাপই বেশী স্পষ্ট। সমীক্ষার রিপোর্ট এ এই কথা পরিষ্কার। কন্ডোম ব্যাবহার এর শতাংশ বিচারে গ্রামে ৭.৬ শতাংশ আর শহরের পুরুষের মধ্যে ১৩.৬ শতাংশই মাত্র কন্ডোমের ব্যবহার করেন।
অথচ গর্ভনিরোধক পিলের ব্যবহার করেন এমন মহিলার সংখ্যা ৩৭.৯ শতাংশ। তুল্যমূল্য বিচারে গ্রামে ৩৮.৭ শতাংশ মহিলা ও শহরে ৩৬.৩ শতাংশ মহিলা গর্ভনিরোধক পিলের ব্যবহার করে থাকেন। অথএব গ্রাম এবং শহরের মহিলাদের মধ্যে গর্ভনিরোধক পিলের ব্যবহারে খুব বেশি পার্থক্য নেই।
২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল এই তিন বছরের উপর করা এই সমীক্ষা রিপোর্ট যদিও জানাচ্ছে, মহিলাদের মধ্যে নির্বীজকরণের হার ক্রমশ বাড়ছে। আর প্রতি ১০ জন ভারতীয় মহিলার মধ্যে চারজন যৌন সঙ্গমের পর গর্ভ নিরোধক পিল সেবন করে থাকেন। গ্রাম অঞ্চলের চেয়ে বেশি শহরাঞ্চলের মহিলাদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ভারতের ৩৬টি রাজ্যের মধ্যে ২৩টি রাজ্যের পুরুষদের মধ্যেই যৌন সঙ্গমের সময় কন্ডোমের ব্যবহারে অনীহা আছে। কন্ডোম ব্যাবহার সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে চণ্ডীগড় (৩১.১ শতাংশ) আর উত্তরাখণ্ড (২৫ শতাংশ)। যদিও সমীক্ষায় আরেকটি বিষয় পরিষ্কার, কন্ডোম ব্যাবহারের অনিচ্ছার কারণ সচেতনতার অভাব নয়। কেননা ৮২ শতাংশ পুরুষই কন্ডোমের ব্যবহার এবং তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ওয়াকিবহাল। এমনকী, AIDS প্রতিরোধে কন্ডোমের কার্যকারিতা নিয়েও জানা আছে অধিকাংশ পুরুষ এর। তবে কেন ব্যাবহারে অনীহা? সমীক্ষার রিপোর্টে পাওয়া গেছে সেই উত্তরও। বিবাহিত পুরুষদের বেশীরভাগ মনে করেন, বিয়ের পর কন্ডোম ব্যবহার তাদের স্ত্রীর কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করে। তার থেকেও অবাক করা এই যে বেশিরভাগ পুরুষ মনে করে পরিবার পরিকল্পনা এবং গর্ভধারণ বিষয়ে সচেতন থাকার দায়িত্ব কেবল মহিলাদের। পুরুষদের জন্য যৌন সম্পর্ক শুধুই শারীরিক তৃপ্তির জন্য। আর সে ক্ষেত্রে কন্ডোমের ব্যবহার সেই তৃপ্তি কমিয়ে দেয়। ৪০ শতাংশ পুরুষ মনে করেন, অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ যাতে না হয়, তার জন্য দায় নিতে হবে মহিলাদেরই।