কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালন করা একটি প্রাচীন হিন্দু উৎসবের নাম ছট পুজো। ছট পুজো হল আসলে সূর্য পুজো। এই লৌকিক উৎসবটি বহুল প্রচলিত পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে। ছট পুজোতে সূর্য এবং তার পত্নীকে পৃথিবীকে জীবন ধারণের জন্য উপযোগী রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও তাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভের কামনা করা হয়। কিন্তু
ছট পুজো নাম কেন?
সেই প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে সূর্যকে পুজো করার রীতি চলে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন আসে যদি সূর্যেরই উপাসনা করা হয় তাহলে এই পুজো বা ব্রতর নাম কেন ছট পুজো ? ছট বা ছঠ, ষষ্ঠী তিথির নামের অপভ্রংশ। মূলত সূর্য ষষ্ঠী ব্রত হওয়ার কারণে একে ছট নামে অভিহিত করা হয়। মৈথিলী ভাষা এবং ভোজপুরী ভাষায় ষষ্ঠ বা ছয়কে ছঠি হিসাবে উচ্চারণ করা হয়। আবার এই পুজো ছট্ অর্থাৎ ছটা বা রশ্মির পূজা। সেই ক্ষেত্রেও নাম এমন। সাথে আবার আরেক পৌরাণিক মতও বেশ প্রচলিত, সূর্যদেবের পাশাপাশি তার পত্নী ঊষাকেও এই পূজায় উপাসনা করা হয়। আর ঊষা দেবী ‘‘ছোটি মইয়া” হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে। ছোটী মাঈ নামে পরিচিত ঊষা দেবীর প্রতি সমর্পিত পুজো হওয়ায় থেকেই ছট পূজার নামটি প্রচলন হয়েছে।
কবে থেকে শুরু হয় ছট পুজো?
প্রচলিত বিশ্বাস মতে‚ বৈদিক যুগের আগেও নাকি ছিল এই ছট পুজো বা সূর্য উপাসনার চল। মহাভারতে এবং রামায়ণেও আছে ছট পুজোর কথা। সূর্যবংশীয় হওয়ার কারণে শ্রীরামচন্দ্র নিয়মিত সূর্যের উপাসনা করতেন। দীর্ঘ ১৪ বছর বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসার সময় রাম ও সীতা সূর্যের উদ্দেশ্যে উপবাস করে পুজো করেন। সেই থেকেই ছট পুজোর আরম্ভ বলে মনে করা হয়। এছাড়া মহাভারতেও রয়েছে ছট পুজোর কথা। আবার দ্বাপর যুগে সূর্যপুত্র কর্ণ অঙ্গদেশের রাজা ছিলেন। তিনিও সূর্যদেবের উপাসনা করতেন৷ কর্ণ সূর্যের আলোয় আবক্ষ জলে দাঁড়িয়ে সূর্যের উপাসনা দরিদ্রদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করতেন।
পুরাণ মতে, প্রথম মনু প্রিয়বত ও তার স্ত্রী মালিনীর কোনো সন্তান ছিল না। কাশ্যপ মুনির আশীর্বাদে তার স্ত্রী গর্ভবতী হয় কিন্তু মৃত সন্তান প্রসব করে। তখন তারা ক্ষোভে দুঃখে বিলাপ করতে করতে জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে আত্মহত্যা করার জন্য নদীতে গেলে এক দিব্য নারী প্রকট হলেন। সেই দিব্য নারী মৃত পুত্রকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে সে বেচেঁ উঠল। তিনি তখন তাদের ছট পূজা করার জন্য বলেন। অনেক নিঃসন্তান মাতা পিতা সন্তান প্রাপ্তির আশায় ছট পূজা করে থাকে। সেই থেকেও এই পুজোর রীতি।