দীর্ঘকায় দেহ-ই প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে! রঘুনাথগঞ্জের বছর ২৯-এর বাদশা খানের বর্তমান উচ্চতা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি। কিন্তু এখনও বৃদ্ধি থেমে নেই। তাই এলাকাবাসী ‘লম্বিজি’ বলেই তাঁকে ডাকে। এটা শুনতে ভালো লাগলেও দীর্ঘকায় চেহারাই এখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের বাদশার।
রঘুনাথগঞ্জ থানার জঙ্গিপুর (Jangipur) পুর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা বাদশা খান। অতিকায় উচ্চতার এই যুবক তাঁর উচ্চতা নিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন। ওঠা-বসা, হাঁটা-চলা থেকে যানবাহনে উঠতে কার্যত সমস্যায় পড়তে হয় তাঁকে। সুদীর্ঘ এই উচ্চতা তাঁর কর্মক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। অভাবের সংসারে জীবিকা নির্বাহ করতে কখনও গ্রামে-গ্রামে ফেরি, কখনও হোটেলে কাজ, আবার কখনও সিকিউরিটির কাজ করেছেন। কিন্তু অত্যাধিক উচ্চতার জন্য ঝুঁকে কাজ করতে অসুবিধা হয় বাদশার। চলাফেরায় শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারছেন না বাদশা। বার দুয়েক পড়ে গিয়ে পাঁজরের হাড়ও ভেঙেছে। ফলে কাজে গিয়েও স্বচ্ছন্দে কাজ করতে না পারায় কাজ হারাতে হয়েছে একাধিকবার। জামা-প্যান্ট বছর-বছর ছোট হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে, চরম সমস্যায় পড়েছেন দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান। তাই এলাকাবাসী যখন লম্বিজি বলে ডাকে, তখন আনন্দ তো হয় না, বরং একরাশ দুঃখ, হতাশা গ্রাস করেছে বাদশা খানকে। তাঁর কথায়, আগে ওই ডাকে রাগ হত। এখন রাগ হয় নিজের শারীরিক গঠন নিয়ে। আগামিদিনে বৃদ্ধি না থামলে কোথায় পৌঁছবেন, কাজ না করতে পারলে কী হবে- সেই চিন্তাই রাত-দিন কুড়ে-কুড়ে খাচ্ছে তাঁকে।
জানা গিয়েছে, ছোট থেকে আর পাঁচজনের মতই স্বাভাবিক ছিলেন বাদশা। পড়াশোনাতেও মেধাবী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই স্কুলে পড়ার সময় ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান। তারপর স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর ব্রেন টিউমার অপারেশন হয়। তারপর থেকেই নতুন সমস্যার উপদ্রপ।
বাদশার এক আত্মীয় জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ব্রেন টিউমার অপারেশনের পর বাদশার শরীরে হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার ফলেই তাঁর ক্রমাগত বৃদ্ধি হতে থাকে। অতি অল্প সময়েই বাদশার উচ্চতা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চিতে পৌঁছে যায়। তবে এখানেই শেষ নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা বাড়ার আরও সম্ভাবনা রয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞদের দাবি। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুবক ও তাঁর পরিবার।
বাদশার পরিবারে তাঁর বাবা-মা ও এক ভাই রয়েছেন। সংসারে অভাবের মধ্যেও বাদশার চিকিৎসা চালাচ্ছে তাঁর পরিবার। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না। তবে ভালোভাবে চিকিৎসা করলে বাদশা সেড়ে উঠতে পারেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিন্তু ভালোভাবে চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য পরিবারের নেই। তাই অনুপায় হয়ে বাদশা ও তাঁর পরিবার এখন সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন।