হাতে প্রস্রাবের থলি। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউতে সেই ভাবেই ৮২ বছর বয়সে এক অসহায় বৃদ্ধ রাস্তায় চলতে চলতে হোঁচট খেয়ে চলছেন। একাকি। কিন্তু তার একা থাকার কথা ছিল না। লখনউয়ের রাকাবগঞ্জের বাসিন্দা রামেশ্বর প্রসাদের দুই যুবক ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। এত পরও তিনি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আসলে অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথে ছেলেরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং সে হাতে প্রস্রাবের থলি নিয়ে অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে মেয়েরাও তাঁর খেয়াল রাখতে চায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ওয়ান স্টপ সেন্টার তাকে সরোজিনী নগরে অবস্থিত পাবলিক এডুকেশন ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেছে।
প্রিয়জনদের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বেদনা প্রবীণ রামেশ্বর প্রসাদের চোখেও স্পষ্ট দেখা যায়। এদিকে, ওয়ান স্টপ সেন্টারের ইনচার্জ অর্চনা সিং, তার দলের সাথে, বৃদ্ধকে বিচার দিতে ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেছেন।
যতদিন টাকা ছিল, ততদিন সন্তানদের একজন বাবা ছিলেন। রামেশ্বর প্রসাদ জানালেন, তার মশলার ছোট ব্যবসা ছিল। তিনি আরও জানান, আগে রাকাবগঞ্জে থাকতেন, পরে টিকাইতগঞ্জে চলে আসেন। গত ২৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। রামেশ্বর প্রসাদ বলেন তার দুই ছেলে আছে যারা ড্রাইভার। যেখানে চার মেয়ে রয়েছে এবং তাদের সবাই বিবাহিত। তার ছেলেরা প্রায়ই তাকে হয়রানি করে। বড় ছেলে তার গায়ে দুবার হাত তুলেছে। এ নিয়ে দুই ছেলেই একে অপরকে বাবাকে রাখতে বলে। দুই ভাইয়ের সম্পর্ক ভালো নেই।
রামেশ্বর প্রসাদ জানান, মাঝপথে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁর মেয়ে তাঁকে বলরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়, কিন্তু নিজে সেখান থেকে চলে যান। এ সময় প্রস্রাব ও গ্যাস না হওয়ায় চিকিৎসকরা প্রস্রাবের ব্যাগ দেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি প্রস্রাবের ব্যাগ নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছান, কিন্তু ছেলেরা তাকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। প্রায় ৩ দিন বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে থাকতে হয়েছে তাকে। এরপর তিনি তার মেয়েদের কাছে গেলে সবাই তাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। এরপর রাস্তার পাশে প্রস্রাবের ব্যাগ নিয়ে বসে ছিলেন, এসব দেখে ওয়ান স্টপ সেন্টারের দল তাকে আশ্রমে নিয়ে যায়। প্রসাদের স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
আশ্রমে সহযোগিতা পেলেন
রামেশ্বর প্রসাদ বলেছেন যে তিনি তার বাড়ির চেয়ে এই আশ্রমে বেশি স্বস্তি বোধ করছেন। তারা সঠিক সময়ে খাবার, পানীয় ও ওষুধ দিচ্ছে। ওয়ান স্টপ সেন্টারের ইনচার্জ অর্চনা সিং বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুতর। সমাজে প্রবীণদের প্রতি এ ধরনের আচরণ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে।