দূরের থেকে দেখলে বাচ্চাটিকে পুতুল মনে হতে বাধ্য। নিষ্পাপ চাহনি, ফুটফুটে সেই বাচ্চা মেয়েটি বাস্তবেও আস্তে আস্তে পাথরের মূর্তি হওয়ার পথে। চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন তারা কিছু করতে অসহায়। মানবসন্তান হিসাবে রক্তমাংসের বাচ্চা হয়ে মায়ের গর্ভে জন্ম নিলেও, যত দিন বেঁচে থাকবে সে, পাথরের মূর্তি হয়েই কাটাতে হবে তাকে। কেননা এই নিষ্পাপ একরত্তি এক বিরল রোগে আক্রান্ত।
শিশুটির নাম লেক্সি। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি ব্রিটেেনে জন্ম নেয় লেক্সি রবিন্স। ফুটফুটে শিশুকন্যা কে পেয়ে খুশিতে ভরে উঠেছিল শিশুটির বাবা মা , অ্যালেক্স এবং ডেভ রবিন্স। কিন্তু ফুটফুটে হাসিখুশি লেক্সি কয়েকদিন পর থেকে হাতের বুড়ো আঙুলটি একেবারেই নাড়াচ্ছিল না। তাও অ্যালেক্স এবং ডেভ এতটা চিন্তিত হন নি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা খেয়াল করেন, লেক্সির পায়ের আঙুলগুলোও যেন ঠিক স্বাভাবিক নয়। কিছুটা বড়। চিকিৎসকের দেখান তাঁরা।
প্রাথমিক ভাবে কেউই শিশুটির সমস্যা ধরতে পারেননি। তারা জানান লেক্সি হয়ত হাঁটতে পারবে না। সুস্থ-সবল লেক্সিকে দেখে তা মানতে পারেননি তার বাবা মা। তাই বিশেষজ্ঞকে দেখায় তারা।
কিন্তু বিশেষজ্ঞের থেকে তারা যা শোনেন তাতে নির্বাক হয়ে যান অ্যালেক্স এবং ডেভ। জানতে পারেন তাঁদের ছোট্ট মেয়ে লেক্সি ফাইব্রোডিসপ্লেসিয়া ওসিফিকানস প্রগ্রেসিভা (FOP) নামের বিরল রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের স্বাভাবিক হারের যে কঙ্কাল তার বাইরেও হাড় গজায়। যত সময় গড়ায় শরীরে মাংসপেশীও হাড়ে পরিণত হয়। হাড়ের আধিক্য এর কারণে একটা সময় শরীর কার্যত পাথরে রুপান্তরিত হয়।
চিকিৎসকরা জানান, সেই পাঁচ মাসের শিশুটির পায়ের পাতা আর আঙুলের মাঝের হাড়ের সমস্ত সন্ধিস্থলগুলি ফুলে রয়েছে। সেই কারণেই আঙুল নাড়াতে পারছে না সে। তারা আরও বলেন, কানের হাড় বৃদ্ধি পেয়ে লেক্সির বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভানাও যথেষ্ট। দাঁতের কোনো চিকিৎসা করাতে পারবে না লেক্সি। তার শরীরে কোনও ইঞ্জেকশনও দেওয়া যাবে না।
গোটা পৃথিবীতে লেক্সির মতো বিরল রোগ মাত্র কিছু জনের শরীরেই দেখা যায়। এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হলে ২০ বছর বয়সের আগেই বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান আক্রান্তরা। সাধারণত এরা সর্বাধিক ৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।