ভাগ্যলক্ষী কখন কার উপর তুষ্ট হয় তা বোধহয় কেউ বলতে পারে না! এমনই এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলেন মালদার এক ব্যান্ডপার্টির বাজনাওয়ালা শঙ্কু ঋষি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে প্রায় অনাহারে দিন কাটছিল। অভাব এতটাই প্রকট যে দারিদ্র্যে, অবসাদে ভেবেছিলেন আত্মহত্যা করবেন। আর তারপরেই যেন রাতারাতি পাল্টে গেল চিত্রটা। মুখ তুলে চাইলেন ভগবান। তিনি কোটিপতি হয়ে গেলেন!
মালদার ইংরেজবাজারের বিনয় সরকার রোডের বাসিন্দা শঙ্কু ঋষি। বিএস রোড এলাকার এই ব্যাক্তির কথা এখন মুখে মুখে। পেশায় ব্যান্ডপার্টির বাজনা বাজান শঙ্কু ঋষি। নিজের স্ত্রী, এক ছেলে,এক মেয়ে, বয়স্ক বাবা ও মাকে নিয়ে তাঁর সংসার। মা ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। ছোটো ভাই আছে, সে শৈশবেই বিকলাঙ্গ। এক ছাদের তলায় সকলে কষ্টে কাটান। করোনা আবহে বাজনা বাজানোর অর্ডার প্রায় বন্ধ। সংসার চালানো দায় হয় শঙ্কু বাবুর। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এমন অবস্থা। তাই রাজমিস্ত্রির কাজে সাহায্য করার জন্য শ্রমিকের পেশা নেন তিনি। তাতেও ভাত জোটানো মুশকিল হচ্ছিল সকলের। তাই ১৭ দিন আগে বাড়ির সামনেই একটি লটারির দোকান খুলে বিকল্প উপার্জনের চেষ্টা করেছিলেন। তাও কিছু বিক্রী বাট্টা হলেও গত কদিনের আবহাওয়ার জন্যে তেমন বিক্রি নেই। বৃষ্টিতে টিকিট বিক্রি বাট্টা না হওয়ায় ১২০০ টাকার ক্ষতি হয় তাঁর। একে দারিদ্র্য তার উপর এতগুলো টাকা লোকসান, সব মিলিয়ে ভেঙে পড়েন। রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে দেন শঙ্কু। এরপর কী করবেন দিশা পান না! সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন আত্মহত্যা করার। শঙ্কু ঋষির স্ত্রী ও বাড়ির লোকেরা তাঁকে বিরত করেন। ফের বসেন ব্যবসায়। সোমবার থেকে আবারও কিছু কিছু বিক্রী শুরু হয়। একটা বান্ডিল বিক্রী হয় না। আর সেই বিক্রি না হওয়া লটারির বান্ডিল থেকেই ১ কোটি টাকা পুরষ্কার লেগে গেল শঙ্কুর।
সোমবারের এই ঘটনায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন শঙ্কু বাবু এবং তাঁর গোটা পরিবার।একবার টিকিটের বান্ডিল খুললে সেটা আর এজেন্সি ফেরত নেয় না। বিক্রী না হওয়া টিকিটের ব্যাপারে কয়েক ঘণ্টা মধ্যেই ডিস্ট্রিবিউটারের কাছ থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। তিনি তাকেই জানায় তার কাছে বেচে যাওয়া টিকিটেই এক কোটি টাকা পুরস্কার লেগে গিয়েছে! টিকিটের নাম্বার মিলিয়ে দেখেন, ডিয়ার লটারির পড়ে থাকা বান্ডিলের একটি টিকিটে ১ কোটি টাকা লেগে গিয়েছে তার। হঠাৎ করে কোটি টাকার লটারি লাগায় আবেগাপ্লুত শঙ্কু ঋষি।
কিন্তু হঠাৎ করে এত টাকা জিতেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শঙ্কু সহ তাঁর গোটা পরিবার। এই পরিস্থিতিতে সরকারী নিয়ম মেনে ও নিরাপদে তার জেতা টাকা পেয়ে গেলে তিনি উপকৃত বলেন বলেই জানাচ্ছেন শঙ্কু ঋষি।
টাকায় পরিবারের বিশেষ উপকার হবে বলেও জানান তিনি। তবে টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি চিন্তিত। শঙ্কুর ইচ্ছা এই জেতা টাকা দিয়ে বাবা-মায়ের ভালো চিকিৎসা করবেন। একটা ঠিকঠাক বাড়ি বানানো। নিজের ছেলে মেয়েকে ঠিকভাবে শিক্ষিত করে তোলা। অবশ্য শঙ্কু জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি নিজের পুরনো পেশা ব্যান্ড পার্টির বাজনা বাদকের কাজও চালিয়ে যাবেন তিনি।