কথায় বলে বন্ধুত্বের বন্ধন রক্তের সম্পর্ককেও পিছে ফেলতে পারে। বন্ধুত্ত্ব আপাত খুব ছোট একটা শব্দ। কিন্তু তার পরিসর অনেক বড়। এর জলজ্যান্ত প্রমাণ দিয়েছে রাঁচির দেবেন্দ্রকুমার শর্মা। দেবেন্দ্র যখন জানতে পারে তার বন্ধু রজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত, এবং তার শ্বাস কষ্টের সমস্যায় তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন অক্সিজেনের, তখন তাদের মধ্যে দূরত্বের ব্যাপারে তিনি একবারও। প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিমি পথ অবলীলায় পার করে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে গিয়েছিলেন! বন্ধুত্বের এমন উদাহরণ সকলেই বিস্মিত করেছে।
জেনে নিন ঠিক কী ঘটেছিল? গত ২৪ এপ্রিল দেবেন্দ্রর কাছে একটি ফোন আসে। সঞ্জয় সাক্সেনা নামের এক বন্ধু ফোন করে দেবেন্দ্রকে জানান রজনের করোনা চিকিৎসার জন্য ভীষন ভাবে প্রয়োজন অক্সিজেনের। অথচ বাকি আছে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মতো অক্সিজেন! এহেন খবর পাওয়ার সাথে সাথেই আর অপেক্ষা করতে পারেননি দেবেন্দ্র। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই অক্সিজেনের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। সারা রাত বাইক চালিয়ে দেড়শো কিমি পারি দিয়ে সকালে হাজির হন বোকারোয়। সেখানেও অক্সিজেনের অমিল।
বাধ্য হয়েই ঝাড়খণ্ড গ্যাস প্ল্যান্টের মালিকের কাছে গিয়ে হাজির হন দেবেন্দ্র। নাছোড় বান্দা হয়ে ওঠেন অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে দেওয়ার জন্য। বন্ধুর জন্যে এমন ব্যাকুলতার কথা শুনে তিনি আর স্থির থাকতে পারেন নি। অক্সিজেনের ব্যবস্থা তো তিনি করে দিলেনই এমনকি এর বিনিময়ে কোনও টাকাও তিনি নিলেন না। বললেন আগে বন্ধু রজতকে বাঁচাও। তারপর দাম মেটানোর কথা ভাবা যাবে।
এরপর শুরু হয় দেবেন্দ্রর গাজিয়াবাদ যাত্রা। একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে তাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিমি পথ পেরিয়ে বন্ধুর কাছে পৌঁছলেন দেবেন্দ্র। গত ২৫ এপ্রিল ঝাড়খণ্ড থেকে যাত্রা শুরু করে টানা ১ দিন গাড়ি চালিয়ে ২৬ এপ্রিল সেখানে পৌঁছন দেবেন্দ্র। বন্ধুর এই চেষ্টা সফল হয়। অক্সিজেন পেয়ে রজনের শ্বাস কষ্টের সুরাহা হয়। সে আপাতত বিপন্মুক্ত। এখনও তার করোনার চিকিৎসা চললেও আশঙ্কার কিছু নেই বলেই জানিয়েছেন ডক্টররা।
কিছুদিন আগেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান দেবেন্দ্রর এক বন্ধু। এরপরই রজন অসুস্থ হওয়ার খবর শুনলে তিনি আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি। বাকি বন্ধু ও রজনের পরিবারের কাছে বাস্তবের ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছেন দেবেন্দ্র।