অজয় নদের বাঁধ ভেঙে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ভয়ঙ্কর প্লাবনে তলিয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি। জলের তোড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে গ্রামের বিঘের পর বিঘে ফসল। জমি বাড়ি হারিয়ে মাথায় হাত পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের সাঁতলা গ্রামের বাসিন্দাদের। আশ্রয়হীন অবস্থায় গ্রামের কাছের নদীবাঁধই এখন গ্রামবাসীদের নতুন ঠিকানা। বাঁধের উপর সারি দিয়ে পড়েছে সহায় সম্বলহীন গ্রামবাসীদের একের পর এক তাঁবু। সেখানকার একটি তাঁবুতেই শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন অশতিপর বৃদ্ধা ননীবালা জোয়ারদার। বয়স ১০০ পার করা বৃদ্ধা কার্যত মৃত্যুমুখী। তাবুতে মিলছে না চিকিৎসার ব্যবস্থা। এমনকি দুবেলা জুটছে না খাবারও। বাংলা সংবাদপত্র সংবাদ প্রতিদিনের এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই বেহাল চিত্র।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অজয় নদের জলে প্লাবিত বর্ধমান জেলা। হু হু জল ঢুকতে শুরু করে আউশগ্রামের সাঁতলাতেও। বন্যা কবলিত হয়ে পড়েন বহু মানুষ। পরিস্থিতি ক্রমশঃ ভয়ঙ্কর রূপ নিতে থাকলে সর্বস্ব খোয়ানোর আগেই কিছু মানুষ তাদের অবলম্বনের সামান্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে সরে এসেছিলেন। তাঁদের বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের উপর। সহায়সম্বলহীন মানুষদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ঠিকানা সেই তাঁবুই। বন্যার কারণেই পরিবারের বাকিদের সঙ্গে ঘর ছাড়তে হয়েছিল শয্যাশায়ী ননীবালা দেবীও।
সাঁতলা গ্রামের বাসিন্দা ননীবালাদেবীর মেয়ে সবিতা। তিনি বলেন, “সেদিন অসুস্থ মাকে কোনও মতে তুলে নিয়ে আসি। এমনিতেই মা বয়সের ভারে অসুস্থ। তারওপর এই বন্যা দুর্যোগে আরও ভেঙে পড়েছেন। এখন সামান্য চিকিৎসার সুযোগ নেই। মাথায় ওপর ছাদ নেই। একপ্রকার খোলা আকাশের নিচে এভাবেই দিন কাটছে।”
ননীবালাদেবীর সম্পর্কে ভাইপো নৃপেন জোয়ারদার বলেন, “আমরা স্বল্প কিছু জমিতে সবজি চাষ করতাম। পুকুরে মাছ চাষ হত। এখন বন্যার কারণে সবজি ক্ষেতে শুধু পলির স্তর। পুকুর জলে ভেসে গিয়েছে। জেঠিমাকে যে এমন অবস্থায় কোথাও ঘরভাড়া করে রাখবো সেই সামর্থ্য নেই। হয়তো এই তাঁবুতেই তাঁকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।” মেয়ে সবিতাদেবী আরো জানান, চিকিৎসা বলতে শুধুমাত্র একজন আশাকর্মী এসে তার মায়ের শারীরিক অবস্থা দেখে গিয়েছেন। ওষুধপত্র কিছুই মেলেনি। এমনকি নেই কোনো উপযুক্ত খাবার। এখন অজয় নদের বাঁধের উপরে তাঁবুতেই মৃত্যুর দিন গুনছেন শতায়ু ননীবালাদেবী।