একজন পুলিশ কনস্টেবলের ছেলে কীভাবে বিশ্বব্যাপী ত্রাস হয়ে উঠতে পারেন, তা দাউদ ইব্রাহিমের কাহিনী দেখে জানতে পারে গোটা বিশ্ব। তেমনই একজন পুলিশ অফিসারের ছেলে কীভাবে গ্যাংস্টার হয়ে উঠলো তার প্রকৃত উদাহরণ এই জয়পাল সিংহ ভুল্লার।
নিউটাউনের আবাসনে এনকাউন্টারে পুলিশের গুলিতে মৃত দুই দুষ্কৃতী। পঞ্জাব থেকে আসা দুই গ্যাংস্টার যাদের নাম জসসি খাড়ার এবং জয়পাল ভুল্লার , গত ২২ মে থেকে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, এই দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার ১৫ মে লুধিয়ানায় ২ পুলিশকর্মীকে খুন করে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসে। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের মাথার দাম ধার্য হয় ১৯ লক্ষ টাকা। শুধু জয়পাল ভুল্লারেরই মাথার দাম পুলিশ ঘোষণা করে ১০ লক্ষ টাকা।
গ্যাংস্টার জয়পাল ভুল্লার পাঞ্জাবের ফিরোজপুরের বাসিন্দা। তার বাবা ছিলেন পঞ্জাব পুলিশের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর। মেধাবি ছাত্র জয়পাল ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। পাশাপাশি ছিল রীতিমতো স্পোর্টসম্যান। খেলাধুলায় বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে সে।
কিন্তু ক্রমশই অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়ে জয়পাল। পুলিশ বাবার খাকি উরদি গায়ে দিয়ে অপরাধে জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সে। তার গল্প মিল খায় মুম্বই পুলিশের হেড কনস্টেবলের পুত্র দাউদ ইব্রাহিমের সাথে।
একাধিক খুন, ডাকাতি, তোলাবাজি ইত্যাদি অপরাধে অভিযুক্ত হয়। পাতিয়ালায় একটি ব্যাঙ্ক ডাকাতির সাথেও জড়ায় জয়পালে। টাকার লোভে পাঞ্জাব, হরিয়ানার গ্যাংস্টার হয়ে ওঠে সে।
২০১৬ সালে নিজের শত্রু রকিকে খুন করার পর অপরাধ জগতের প্রফেশনাল হয়ে ওঠে জয়পাল। সঙ্গে নেয় নিজের ভাই অমৃতপাল সহ আরও কিছু মানুষ কে। জয়পালের গ্যাং – এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয় প্রচুর খুন, খুনের চেষ্টার। ২০১৭ সালে এক ব্যাংকের ক্যাশ ভ্যান থেকে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ডাকাতি, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩০ কিলো সোনা লুঠ ইত্যাদি অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
গত বছরই জয়পালের ভাই অমৃতপাল ও গগনদীপকে পাঞ্জাব পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পাঞ্জাব পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ভিকি গাউন্ডার ও প্রেমা লাহোরিয়ার। কিন্তু তাতেও দমিয়ে রাখা যায়নি জয়পাল কে। বাকি সঙ্গীদের নিয়ে সে ঘটিয়ে চলে সংগঠিত অপরাধ। আরও এক কুখ্যাত গ্যাংস্টার লাকির সঙ্গে পরিচয় জয়পালের। খুন , অপহরণের ইত্যাদি কুকর্মে অভিযুক্ত লাকি জয়পালের গ্যাংয়ের সঙ্গে শুরু করে চোরাচালান।
পুলিশ সূত্রে খবর গত ১৫ মে, লুধিয়ানায় গুলি করে সে খুন করেছিল পঞ্জাব পুলিশের দুই এএসআই-কে। তারপর থেকেই কলকাতায় গা ঢাকা দিয়েছিল সে। জানা যায় এরপরই কলকাতা পুলিশকে জয়পাল সম্পর্ক জানায় পঞ্জাব পুলিশ। তারপরই নিউটাউনে এনকাউন্টারে মৃত্যু হল সেই ভুল্লার ও তার সঙ্গী জসপ্রীত সিংহ জাসসির।