একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও মানুষের কিছু কিছু কুসংস্কার রয়েছে যেগুলিকে লজ্জাজনক বললেও কম বলা হয়। রাজস্থানের ভিলওয়াড়া থেকে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে কুমারীত্ব পরীক্ষা বা ভার্জিনিটি টেস্ট (Virginity Test) ফেল করায় এক নববধূকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশ একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। এটি ঘটনাটিকে গুরুত্বের সাথে বিচার করা হবে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্যাতিতার মা জানান, ৬ মাস আগে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী এক যুবক। এর পাশাপাশি মহিলার ছেলেদের মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন, এ কারণে তিনি চুপ ছিলেন। এরপর ১১ মে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে মধুচন্দ্রিমার আগে তার কুমারীত্ব পরীক্ষা করতে স্থানীয় এক আচার কুকদির আচার পালন করা হয়। যেটিতে তিনি ব্যর্থ হয়ে যান। এরপর সে তার সাথে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের কথা শশুর বাড়ির লোকেদের জানায়। এরপর ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েটির বিরুদ্ধে সামাজিক পঞ্চায়েত ডেকে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এই বিষয়টি জানার সাথে সাথেই রাজ্য মহিলা কমিশন এই বিষয়ে ভিলওয়াড়া জেলা পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে।
নির্যাতিতা জানায় কিভাবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে বলপূর্বক ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। সেই দিন তার বাবা-মা বাড়িতে ছিল না, বিয়েবাড়ি গিয়েছিল। সে রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিল। কিন্তু পাড়ায় বসবাসকারী এক যুবক এই সুযোগে তাকে নিজের লালসার শিকার বানান। কাউকে কিছু বললে দুই ভাইকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। তাই নির্যাতিতা ও তার পরিবার কাউকে কিছু বলে না।
এদিকে বিয়ের পর কুমারীত্ব পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এই ঘটনা সর্বত্র নিন্দিত হচ্ছে। প্রসঙ্গত কুকদি পদ্ধতিতে, বিয়ের প্রথম রাতে, নববিবাহিত দম্পতিকে কাঁচা তুলার পাত্র দেওয়া হয়। ভার্জিনিটি টেস্ট নাকি এভাবেই হয়।
এ বিষয়ে ভিলওয়াড়ার পুলিশ সুপার আদর্শ সিধু বলেন, এটি একটি সামাজিক সংস্কারের কুফল। যা পুলিশ, এনজিও ও সামাজিক সংগঠনগুলি বহুদিন ধরে নির্মূল করার চেষ্টা করে আসছে। এ ব্যাপারে যে কোনো ধরনের সামাজিক পঞ্চায়েত বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মেয়েটির দায়ের করা ধর্ষণের ঘটনায়ও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।