এসেছিলেন হাসপাতালের আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু বিপাকে পরে টানা চার দিন প্রায় আটকে রইলেন বিকল লিফটে। বয়স্ক মহিলার সম্বল বলতে ছিল একটা চিরের প্যাকেট আর একটা জলের বোতল। তাই নিয়েই উত্তর ২৪ পরগনার বাদুরিয়া থানার পশ্চিম চণ্ডীপুরের বাসিন্দা আনোয়ারা বিবি কাটিয়ে দিলেন চারদিনের বেশী সময়। ঘটনাটি ঘটেছে নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (NRS Hospital)।
বৃদ্ধার বয়স ষাট পার করেছে। তিনি নার্ভের সমস্যায় ভুগছিলেন। তাই সোমবার সকালবেলা ডাক্তার দেখাতে একা একাই ট্রেনে করে চলে আসেন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে হাঁটা পথে একটু দূরে নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে। নিয়ম মতন আউটডোর টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাবেন। ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে ছোট লিফটে উঠতেই মাঝপথে লিফট গেল আটকে। তারপর থেকে সব বন্ধ।
আনোয়ারা বিবির ছেলে আবুল হোসেন মণ্ডল জানান, “ মাত্র এক বোতল জল আরেকটা চিড়ের প্যাকেট নিয়ে সোমবার থেকে শুক্রবার দুপুর অবধি আমার মা লিফটের ভেতরে আটকে ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয় যে মা হাসপাতালের ফাঁড়িতে আছেন। এসে নিয়ে যান।” আবুল হোসেনের কথায়, “এই ক’দিন মা কোথায় আছে সব জায়গায় খুজেঁ বেড়িয়েছি। হাসপাতালের ফাঁড়িতে পৌঁছে শুনি মা নাকি চার দিন লিফটে আটকে ছিলেন। লিফটের মধ্যে এক বোতল জল আর চিড়ে খেয়ে কাটিয়েছেন। লিফটের ভেতরেই প্রস্রাব করেছেন। এমনটা কি করে ঘটে গেল বুঝতে পারছি না।”
আসলে নাকি শনিবার পশ্চিম চণ্ডীপুর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি পৌঁছেছিলেন আনোয়ারা বিবি। সেখান থেকে সোমবার গেছিলেন নীল রতন সরকার হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সোমবার দুপুর থেকে শুক্রবার সকাল অবধি এক বিকল লিফটে আটকে থাকলেও কেন কেউ খবর পেলেন না। এমনকী, একটা লিফট খারাপ হয়ে পড়ে রইল কিন্তু মেরামত হল না? এন আর এসের মতো কলকাতার বুকের একটি সরকারি হাসপাতালে এমনটা কী করে সম্ভব? হাসপাতালের সুপারকে এই বিষয়ে জানার জন্য ফোন করলেও উত্তর মেলেনি।
রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা এই ধরণের ঘটনায় হতবাক। ডা অজয় চক্রবর্তী রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাও রীতিমতো বিস্মিত। তাঁর কথায়,”একজন আটকে রইলেন এন আর এসের মতো রীতিমতো ব্যস্ত হাসপাতালে লিফটে কিন্তু কেউ জানতেও পারল না সোমবার দুপুর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত? কী করে সম্ভব এটা!” তাঁর কথায়,” জানতে হবে সমস্ত ঘটনা। বিষয়টি জানানো হবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও।”
থানায় ডায়েরি করা হয়েছে আবুল হোসেন মন্ডলের কথায়। তিনি বলেন, হাসপাতালে পৌঁছে যান তাঁর মা সোমবার সকাল আটটা নাগাদ। আটকে যান লিফট খারাপ হয়ে যাওয়ায়। তবে আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাননি মাকে খুঁজে পেয়ে। বাড়ি চলে আসেন সোজা। কেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাননি তার কোনও স্পষ্ট উত্তর আনোয়ারা বিবির ছেলের থেকে মেলেনি। তবে স্বাস্থ্য ভবন এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে।