স্বামী অসুস্থ। পরিবারে টাকা পয়সার অনটন। পয়সার অভাবে ঠিক মত চিকিৎসা করতে পারছিলেন না। সেই থেকেই ঘিরে ধরেছিল ভবিষ্যৎ ঘিরে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা। অবসাদে ভয়াবহ কান্ড ঘটিয়ে বসলেন স্ত্রী।
গাজিয়াবাদ জেলার লোনির ট্রনিকা সিটি থানা এলাকার এলাচিপুর গ্রামের ঘটনা। স্বামীর যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা ঠিক মত হচ্ছে না এই আশঙ্কায় শনিবার সন্ধ্যায় এক মহিলা তার তিন (দুই মেয়ে ও এক ছেলে) সন্তানসহ বিষ খেয়েছেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মহিলা ও একমাত্র ছেলের। রবিবার সকালে দিল্লির জিটিবি হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন দুই মেয়ের মৃত্যু হয়। পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
ইলাইছিপুর গ্রামের আমান গার্ডেন কলোনিতে পরিবার নিয়ে থাকেন মনু। সে দিন মজুরের কাজ করে। বাড়িতে স্ত্রী মনিকা (বয়স ৩০ বছর), ছেলে অংশ (বয়স ৩ বছর), দুই মেয়ে মানালি (বয়স ১১ বছর) ও সাক্ষী (বয়স ৬ বছর) সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা থাকেন। ১৩ বছর আগে বিয়ে হয় মনু ও মনিকার।
পুলিশ জানায়, মনুর বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সিও রজনীশ কুমার উপাধ্যায় জানান, এনাদের প্রতিবেশী লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় তিন মাস আগে মনুর টিবি হয়েছিল। তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও সুস্থ ছিলেন না।
প্রতিবেশীরা জানান, কিছুদিন আগে মনুর বাবা রাম সিংও টিবিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। যার কারণে মনিকা মানসিক চিন্তা ও আশঙ্কায় থাকত। মনিকা চেয়েছিলেন তার স্বামীকে একটি বড় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে লোকজন জানায়, টাকার অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করতে না পেয়ে চিন্তিত থাকতো মণিকা।
মনুর ভাই পাশেই থাকে। শনিবার মনু কাজে বেরিয়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মনিকা তার তিন সন্তানসহ বাড়িতে বিষ পান করে। কিছুক্ষণ পর দুই কন্যার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। মনিকার ও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় কিন্তু তিনি কিছু বলেননি। এ সময় বাড়িতে ছিলেন তার অসুস্থ শাশুড়ী। তিনি দুই নাতনির অবস্থা দেখে কোনোরকমে উঠে তার অন্য ছেলেকে ডাকেন। দুই মেয়ে মানালি ও সাক্ষীর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে মনিকার দেওর উভয় মেয়েকে দিল্লির জিটিবি হাসপাতালে নিয়ে যান এবং ভর্তি করেন।
দুই মেয়ের এমন খবর শুনে মনু বাড়িতে পৌঁছয়। তিনি জানতেন না যে তার স্ত্রী মণিকা এবং ছেলে অংশও বিষ খেয়েছেন। মনু বাড়িতে পৌঁছে দেখেন তার স্ত্রী ও ছেলে ইতিমধ্যেই মারা গেছে। বাড়িতে দুজনের মরদেহ দেখতে পান মনু। মৃতদেহ উদ্ধারের পর পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরে পরিবারের লোকজন পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে সিও পুলিশের টিমসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। এরপরেই জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই কিশোরীর মৃত্যু হয়।
পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। সিও জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই নারী নিজে এবং শিশুদের বিষ পান করান। কী বিষ মেশানো হয়েছিল, সেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বাড়িতে এমন কিছু পাওয়া যায়নি। তদন্ত করছে পুলিশ টিম। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বিষটির বিষয়ে জানা যাবে।