যুগ অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ আজও মেয়েদের কোনো কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। অনেক পরিবার সেই সব গোঁড়ামি ভেঙ্গে এগিয়ে গেলেও কিছু পরিবার আজও চলে আসা রীতি নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে নিজের পিতার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পরিবারের বিরুদ্ধেই রুখে দাড়ালেন মেয়ে।
লাইভ হিন্দুস্তান -এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়া জেলায় বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে সমাজকে বড় বার্তা দিয়েছেন এক তরুণী। উশরাহার থানা এলাকার সরসাইনাওয়ারে পিতার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য কন্যা শুধু তার মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাই নয়, বাবার চিতায় মুখাগ্নি করে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে গোঁড়া রীতিনীতি কে আয়নাও দেখিয়েছেন।
অসুস্থতার কারণে সাইফাই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা চলাকালীন সারসাইনাভারের সন্ত শরণ কাথেরিয়া ৭৪ বছর বয়সে মারা যান। মাঝে হোলির উৎসব হওয়ায় গত ২০ শে মার্চ তাঁকে দাহ করা হয়।
মৃত সন্ত শরণের চার মেয়ে ছিল। চার মেয়ের নাম যথাক্রমে সীতা, চিত্রা, নীলম ও পুনম। যাদের মধ্যে দুইজন সীতা ও চিত্রা সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত। কোনো ছেলে সন্তান না থাকার কারণে, সন্ত শরণের ইচ্ছা ছিল যে তার শেষকৃত্য কেবল তার মেয়েরাই সম্পন্ন করবে। তবে তিনি মারা গেলে এই নিয়ে পরিবারে মতভেদ শুরু হয়। পরিবারের অনেক বয়োজ্যেষ্ঠই এই কাজে বাঁধা দিতে থাকে।
এমনকি পিতার মৃতদেহকে মেয়ের কাঁধে তোলা নিয়ে এবং মুখাগ্নি করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার ব্যাপারেও পরিবারের লোকজনের তীব্র আপত্তি ছিল। কিন্তু তার ছোট মেয়ে পুনম এসব কোনো কিছুর পরোয়া না করে বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। বাবা মারা যাওয়ার শোক সামলে তিনি শুধু মৃতদেহকেই কাঁধে তুলে শ্মশান অবধি নিয়ে যাওয়াই নয়, শেষকৃত্য -এর সব রীতিনীতি সম্পন্ন করে তিনি বাবার মৃতদেহে অগ্নি সংযোগও করেন।
পুনম এই বিষয়ে জানান, সামাজিক রীতিনীতির চেয়ে বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলেন তিনি। বাবা ছিলেন এয়ারফোর্স থেকে অবসরপ্রাপ্ত। সন্ত শরণ কাথেরিয়ার বাকি তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। একমাত্র তার কনিষ্ঠ কন্যা পুনম এখনও অবিবাহিত ছিলেন। শেষ অবধি পুনমই বাবার মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য এগিয়ে আসেন।