কখনও শুনেছেন একজন মাত্র মিনিট তিনেক দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন? নিশ্চই শোনেননি। এমন একজনের কথাই আজ হচ্ছে যিনি এই তিন মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকলেই তাঁর বিপদ। দিনে দশ বার অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। কারণ বিরল রোগের শিকার আমেরিকার মেইনের ব্যাঙ্গোরের বাসিন্দা লিন্ডসে জনসন। এই বিরল রোগের শিকার পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণেই লিন্ডসে। এই ঘটনা সত্যি সে যতই আজগুবি মনে হোক না কেন।
লিন্ডসে এমন এক সময় কাটিয়েছে যখন সে শুধু শুয়েই থাকতো, তার সমস্ত কাজ তার স্বামী করতো। লিন্ডসের এমন অবস্থা হওয়ার কি কারণ ? দিনে কেন তার দশ বার জ্ঞান হারাতে হচ্ছে ? সেই বিরল রোগটি কি?
লিন্ডসে ‘পোস্টুরাল অর্থোস্ট্যাটিক টাকাইকার্ডিয়া সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত।
পোস্টুরাল অর্থোস্ট্যাটিক টাকাইকার্ডিয়া সিন্ড্রোম’ হল যদি কোনও মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে তবে তাঁর শরীরে রক্তের ঘনত্ব কমে যায়। তাই শুয়ে থাকার পর উঠে দাঁড়ালেই মাথা ঘুরে ওঠে । ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যেই সাধারণত এই রোগ বেশি দেখা যায়।
হালকা মাথাব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া হল এই রোগের লক্ষণ। আবার সব ঠিক হয়ে যায় বিছানায় শুয়ে থাকলে। অতিরিক্ত লবণ খাদ্যে যোগ করলে, বেশি করে তরল জাতীয় খাদ্য এবং ওষুধ খেলে লক্ষণগুলি কমতে পারে।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে লিন্ডসে দাঁড়িয়ে থাকলে বাকিদের মতোই তাঁর শরীরের রক্তও পেট, হাত এবং পায়ের দিকে চলে আসে। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় শারীরিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য। কিন্তু তা স্বাভাবিক নয় লিন্ডসের জন্য।
এক সাক্ষাৎকারে লিন্ডসে বলেন, ‘‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রতি আমার অ্যালার্জি আছে। আমাকে আমার কথা শুনে পাগল মনে হলেও এই কথা সত্যি। আমি মিনিট তিনেকের বেশি দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। প্রায় ২৩ ঘণ্টা বিছানাতেই থাকি প্রতিদিন।’’
লিন্ডসের হঠাৎই পেটে এবং পিঠে ব্যথা হতে শুরু করে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে। তখন লিন্ডসে নৌবাহিনীতে কাজ করতেন।
তাঁর শরীর ২০১৮ সালের মে মাস থেকে আরও খারাপ হতে শুরু করে। তিনি নৌবাহিনী থেকে এর পরই অবসর নেন। চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণ কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এই কারণে তাঁকে ঠিকমতো ওষুধও দিতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরা।
তাঁর শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে সেই বছর থেকে। নিয়মিত ভাবে বমি হতে শুরু হয় লিন্ডসের। তাঁর সারা শরীরে এত ব্যাথা হত যে, তিনি যন্ত্রণায় চিৎকার করতেন। ঘন ঘন ‘অ্যানক্সাইটি অ্যাটাক’ও হতে শুরু করে লিন্ডসের।
যেখানে-সেখানে জ্ঞান হারাতেও শুরু করেন লিন্ডসে। ২০২০-তে তিনি হাসপাতালের লিফ্টে জ্ঞান হারান। সুপার মার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়েও এক বার অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান হারাতেন পোষা কুকুরের চিৎকারেও।
এক চিকিৎসক লিন্ডসেকে ‘পোস্টুরাল অর্থোস্ট্যাটিক টাকাইকার্ডিয়া সিন্ড্রোম’ রোগের পরীক্ষা করাতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, তিনি এই রোগে আক্রান্ত।