পন চাওয়া এবং দেওয়া দুইই আইনত অপরাধ। কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমরা ভুলে যাই যে এই পন প্রথা বেআইনি। এমন অনেকেই আছেন যারা হয়তো খুব ভালো চাকরি করেন বা উচ্চ শিক্ষিত কিন্তু তারাই আবার বিয়ে করতে গিয়ে মেয়ের বাড়ির কাছে হাত পেতে বশে থাকেন পন নেওয়ার জন্য, আবার এমন অনেক পরিবার আছে যারা মনে করেন মেয়ে মানেই বিয়ে দিতে হবে পন দিয়ে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে যেখানে গৃহবধুকে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে যতদিন পর্যন্ত পবের টাকা পুরো মেটাতে পারবে ততদিন পর্যন্ত না সে মা হতে পারবে না পারবে সন্তান ধারণ করতে। ওই গৃহ বধূর শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে এমনটাই জানানো হয়েছিল। তার পাশাপাশি পনের টাকা না পেয়ে ওই গৃহবধুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হত। যার শেষ পরিণতি হল আজ, আজ সকালে ওই গৃহবধূর ঘর থেকে উদ্ধার হল তারই ঝুলন্ত দেহ।
ওই মৃতা গৃহবধূর নাম মৌমিতা জানা পাইক। এই মর্মান্তিক দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মহিষামারী বাংলাবাজার এলাকায় ঘটেছে। জানা গিয়েছে,বছর চারেক আগে সুজন পাইকের সঙ্গে সাগর কলেজে পড়ার সময় চণ্ডীপুর গ্রামের মেয়ে মৌমিতা জানার বিয়ে হয়। তাদের দুজনের মধ্যেই ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পেয়েছিল বিয়ের অনেক আগে থেকেই। কিন্তু পনের টাকার ব্যাপার নিয়ে মাঝে মধ্যেই তার উপর চলতো শারীরিক নির্যাতন। তাকে বারবার চাপ দেওয়া হত বাপের বাড়ি থেকে পনের টাকা নিয়ে আসার জন্য।
ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ি থেকে জানিয়েছে যে, ভালোবেসে ফেলেছিলো মৌমিতা, সুজনকে, আর তাই এসব অত্যাচার সহ্য করেও থেকে গিয়েছিল সেখানেই। ইদানিং সেই অত্যাচারের পরিমান আরও বাড়তে থাকে। আর সহ্য করতে না পেরে মা বাবা কে এই ব্যাপারে সব কিছু খুলেই বলে। এরপরই তাকে তার মা বাবা বাড়ি ফিরে আসতে বলে। আর সে কারণেই বাপের বাড়ি আসার জন্য জামাকাপড় গুছিয়েছিল সে। কিন্তু আর আসেননি বাপের বাড়ি ওই দিন।
ঠিক এরপর দিনই অর্থাৎ সোমবার সকালেই শশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধূর বাপের বাড়িতে তার মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। শ্বশুরবাড়ির থেকে বলা হয় যে, ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন তাঁদের মেয়ে মৌমিতা। খবর পেয়ে মৌমিতার দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে সাগর থানার পুলিস। সুজন পাইক ও তাঁর বাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৌমিতার বাপের বাড়ির লোকেরা। যদিও কেউ গ্রেফতার হয়নি এখনও পর্যন্ত।