অন্ধ্রপ্রদেশের আনাকাপল্লে জেলায় চলন্ত ট্রেনে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক মহিলা। ট্রেনেই উপস্থিত এক মহিলা প্রসব করান। ভাগ্যক্রমে মহিলাটি একজন ডাক্তার ছিলেন এবং ট্রেনের একই বগিতে উপস্থিত ছিলেন যেখানে গর্ভবতী এবং তার স্বামী উপস্থিত ছিলেন। মা ও শিশু দুজনেই নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে। মহিলা চিকিৎসক জানান, ট্রেনে সমস্যা সত্ত্বেও প্রসব ভালোই হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত ওই মহিলা তার সঙ্গেই ছিলেন।
মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। সত্যনারায়ণ এবং সত্যবতী দম্পতি বিজয়ওয়াড়ার সেকেন্দ্রাবাদ-বিশাখাপত্তনম রুটে দুরন্ত সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে হায়দ্রাবাদ থেকে তাদের বাড়ি যাচ্ছিলেন। ট্রেনে উপস্থিত আরেক মহিলা কে স্বাথি রেড্ডিও উপস্থিত ছিলেন। স্বাথি রেড্ডি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, “আমি গভীর ঘুমে ছিলাম যখন একজন ব্যক্তি আমাকে ভোর ৪.৩০ টার দিকে জাগিয়ে তোলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তার গর্ভবতী স্ত্রীর প্রসব বেদনা হচ্ছে এবং আমি যদি কোন সাহায্য করতে পারি তবে তা করতে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি জানতেন না যে আমি একজন ডাক্তার, কারণ তিনি তার স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য বগির অন্যান্য মহিলাদের অনুরোধ করেছিলেন।”
স্বাতি জানিয়েছিলেন যে তিনি এমবিবিএসের গত বছর শেষ করেছেন এবং বর্তমানে গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (জিআইটিএএম) মেডিকেল কলেজ, বিশাখাপত্তনমে হাউস সার্জন।
এই দম্পতিকে ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও বড় রেলস্টেশনে নামার কোনও সুযোগ ছিল না, কারণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি যেটি ইতিমধ্যেই রাজামহেন্দ্রভারম অতিক্রম করেছিল আর বিশাখাপত্তনম পর্যন্ত অন্য কোনও স্টেশন ছিল না।
সত্যনারায়ণ সহযাত্রীদের অনুরোধ করছিলেন তার স্ত্রীকে রক্ষা করতে, কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করতে পারেনি। পরিস্থিতির গম্ভীরতা বুঝতে পেরে স্বাতী কাজ শুরু করেন এবং অন্যান্য মহিলা যাত্রীদের সহায়তায় বগিটিকে একটি অস্থায়ী লেবার রুমে রূপান্তরিত করেন।
অস্ত্রোপচার যন্ত্র ছাড়া ডেলিভারি
স্বাতী বলেন, “আমার কাছে অস্ত্রোপচারের কোনো যন্ত্র ছিল না। এ ছাড়া ডেলিভারির জন্য কোনো গ্লাভস ছিল না। ভাগ্যক্রমে, আমার সাথে বেটাডাইন সার্জিক্যাল সলিউশনের বোতল ছিল। আমার পড়াশোনার সময় আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তার থেকেই সত্যবতীকে প্রসব করিয়েছি।
স্বাতী আরও জানিয়েছেন যে নাভি কাটা বা বেঁধে রাখার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বা বাচ্চা পরিষ্কার করার জন্য গরম জলের ব্যবস্থা ছিল না। তবে এসি ট্রেনে শিশুকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করা যেত। প্রসবের সময় মহিলাকে সাহায্য করার পাশাপাশি, স্বাতী দুরন্ত এক্সপ্রেসের টিটিই-এর সাহায্য এর বিষয়ে বলেন যিনি আনাকাপল্লে রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ভেঙ্কটেশ্বর রাওকে একটি বার্তা পাঠান।
হাসপাতালে পৌঁছল স্বাতী
স্বাথি রেড্ডি বলেন যে যদিও স্টেশনে কোনও স্টপেজ ছিল না, টিটিই ব্যাবস্থা করে যাতে ট্রেনটি কিছু সময়ের জন্য সেখানে থামে। “ট্রেন থামার সময়, রেলের আধিকারিকরা মহিলা এবং শিশুটিকে নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তর করার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু আমি তাদের এখানে একলা ফেলে যেতে চাইনি। তাই, আমি তাকে নিয়ে এনটিআর সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম, যেখানে তাকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনুরাধা চিকিৎসা করেন।” সদ্য বাবা হওয়া সত্যনারায়ণ স্বাতীকে তার সময়মত সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানায়।