বিশ্ব উষ্ণায়নের (Global Warming) কারণে বিশ্ব জুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পৃথিবীতে দাবানলের সংখ্যা। গত পাঁচ দিন ধরে ক্রমাগত জ্বলছে গ্রিস সমেত দক্ষিণ ইউরোপ (South Europe)। এছাড়াও ইটালির সিসিলিতে প্রথম শুরু দাবানল শুরু হয়। এখন সেই দাবানলও এখন বাড়ছে ইটালির বিভিন্ন জায়গায়।
ভূমধ্যসাগরের বরাবর যে জায়গা তুরস্ক এবং গ্রীসের মধ্যে সীমারেখা নির্দেশ করেছে সেই সীমারেখা বরাবর পুড়ছে দেশ দুটি। শুধু এই দুটো দেশই নয়, দাবানলে পুড়ছে দক্ষিণ ইউরোপের একাধিক দেশ। তবে রবিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবানলে গ্রিস। ভিটামাটি পুড়ে ছাই হয়ে গৃহহীন কয়েক হাজার মানুষ। হাজার-হাজার মানুষ পালাচ্ছেন আগুনের হাত থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। দাবানলের ভয়াবহতায় ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। তাঁদের মধ্যে একজন দমকলকর্মী (Fire Fighter)। দাবানলের ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বহু মানুষ।
এইদিকে এজিয়ান সাগরতীরবর্তী তুরস্কের পাহাড় ও সমুদ্র ঘেরা বদরামের পাহাড়ে লেগেছে আগুন। রিসর্টগুলি দ্রুত খালি করার নির্দেশ দিয়েছে তুরস্ক প্রশাসন। সেই পাহাড় জ্বলছে। এছাড়াও ওই দেশে ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানভগত আর মারমারিস শহর দু’টি। মানভগতে আগুনে আহত হয়েছে ৪০০ জন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। আর মারমারিসে আহত হয়েছেন ১৫০ জন। রবিবার অবধি অন্তত ১০০টি নতুন করে দাবানল লাগার ঘটনা ঘটেছে তুরস্কে। তার উপর আগুনের শিখায় ইন্ধন দিচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া আর সেই দেশের গরম আবহাওয়া।
তবে তুরস্কের বেশির ভাগ জায়গার আগুনই নিয়ন্ত্রণে এসেছে দমকলবাহিনীর। তবে শনিবার থেকে সেখানে নেমেছে ভালোরকম বৃষ্টি। এই বৃষ্টির কারণেই তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অনেকগুলি জায়গায় আগুন আয়ত্তে আনতে পেরেছে তুরস্ক। একই ভাবে বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছে গ্রিসও।
গ্রিসে পাঁচ দিন ধরে ক্রমাগত দাবানলে জ্বলছে গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ ইভিয়া। প্রশাসনের আপাতত চেষ্টা এই দ্বীপকে ঘিরেই। মাইলের পর মাইল সেই দ্বীপে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিচ্ছে সর্বগ্রাসী দাবানল। পুড়ে গিয়েছে প্রচুর বাড়ি, দোকান পাট এবং বসত এলাকা। অ্যাথেন্সের উত্তরে আরও একটি বড় দাবানলের আগুন চিন্তা বাড়াচ্ছে গ্রিস প্রশাসনের। এই সমস্ত জায়গায় এক সময়ের সাজানো জনপদ বলা যায় এখন ধূসর ছাইয়ের স্তূপে পরিণত। শত চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রের ধারের দেশ তুরস্ক, গ্রিস, ইটালির এই সমস্ত দেশের নানা এলাকা পর্যটকদের কাছে ভীষণ প্রিয়। এ সব এলাকায় পর্যটন থেকে দেশের এবং স্থানীয় লোকদের আয়ের একটা বড় অংশ আসে। ২০২০ সালে করোনার কারণে এই সব জায়গা প্রায় পর্যটকশূন্য ছিল। মার খেয়েছিল পর্যটন ব্যাবসা। করোনা টিকাকরণের পর আস্তে আস্তে খুলছিল দরজা সব ভ্রমণপিপাসুদের জন্য। তার মধ্যেই ভয়ঙ্কর দাবানলের গ্রাসে ভূমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলোর অর্থনীতি ফের ধাক্কা খেয়েছে।