এই মুহূর্তে আপনার হাতের কাছে যে বইটি আছে, সেটি খুলে দেখুন—ডান পাশের পৃষ্ঠাসংখ্যা অবশ্যই বিজোড় হবে। বিশ্বের সব দেশেই ইংরেজি, বাংলা প্রভৃতি যেসব লেখা বাঁ দিক থেকে ডানে পড়তে হয়, তার সবগুলোই কেন এই নিয়ম ব্যতিক্রমহীনভাবে মেনে চলে, তার ব্যাখ্যা খুব কঠিন নয়।
শুরুতে বইয়ের কোনো মুখবন্ধ, সূচিপত্র, প্রকাশকের নাম প্রভৃতি বিষয় থাকত না। ভূমিকাজাতীয় ছোটখাটো বক্তব্য মূল লেখার সূচনায় লেখা হতো। তাই মলাট খুললেই চোখে পড়ার কথা ডান দিকের পৃষ্ঠা, সেটাই বইয়ের শুরু এবং স্বাভাবিকভাবেই তার পৃষ্ঠা নম্বর ১, যেটা বেজোড় সংখ্যা। যদি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠাটা, অর্থাৎ ১ নম্বর পৃষ্ঠা পাতার বাঁ পাশে শুরু করতে হতো, তাহলে মলাট খুলে প্রথম পাতাটা উল্টে বাঁ পাশে তাকাতে হতো, যা পাঠকের জন্য হতো বিরক্তিকর।
আসলে প্রথম দিকে বইয়ের কোনো পৃষ্ঠা নম্বর থাকত না। বইয়ের নাম লেখা পাতার প্রচলন প্রায় ১৫০০ সালের কাছাকাছি সময়ে। ইউরোপে বই ছাপার প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পাতার নম্বর, কোন পাতায় কী থাকবে প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরি হতে থাকে। এসব ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে রবার্ট ম্যালকম গে–র ওয়ার্ডস ইনটু টাইপ বইয়ে। বইটিতে প্রকাশনাবিষয়ক নিয়মনীতির বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। ফলে এটি বই প্রকাশনা সংশ্লিষ্টদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
সে যা হোক, সামান্য পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে যে বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থাকে ডান পাশের পাতায়। যেমন বইয়ের নাম, উৎসর্গ, ভূমিকা প্রভৃতি। বাঁ পাশে থাকে প্রকাশনা, মুদ্রণ, স্বত্ব প্রভৃতি বিষয়ের তথ্য। বইয়ের শুরুর দিকের কয়েকটি পাতার বাঁ পাশ ফাঁকাই থাকে। এরপর বইয়ের মূল অংশ শুরু হয় ডান পাশে, যার পৃষ্ঠা নম্বর ১, যেটা বেজোড় সংখ্যা।