১৮৯৫ সালের এই দিনে অর্থাৎ 27 শে নভেম্বর বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল তাঁর প্রায় পুরো সম্পত্তি একটি উইল করে নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য তহবিল গঠন করেন। গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রতিবছর নানা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নোবেল পদক দিয়ে সম্মানে ভূষিত করা হয়। নোবেল পুরস্কার বর্তমান পৃথিবীতে সর্বাধিক মূল্যবান পুরস্কার ও সন্মান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সকলেই নোবেল পুরস্কার বিষয়ে জানেন। বহু গুণী ব্যক্তি ১০০ বছরেরও আগে থেকে এই নোবেল পুরস্কার সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। আমাদের সকলের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল কিভাবে এই পুরস্কারের প্রচলন করেছিলেন এবং এর নেপথ্যে কারণই বা কী ছিল সেই সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই জানা নেই।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল একাধারে ছিলেন রসায়নবিদ, উদ্ভাবক, প্রকৌশলী এবং ভয়ঙ্কর অস্ত্র নির্মাতা। তার উদ্ভাবন করা সামগ্রীর জন্য তিনি তার নিজের নামে ৩৫৫ টি পেটেন্ট করান। তার আবিষ্কার গুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার হল “ডিনামাইট”। খনিতে, পাহাড় এ রাস্তা তৈরী করতে, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ডিনামাইটের বহুল ব্যবহার রয়েছে। তিনি বোফর্স নামক একটি অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থার মালিক ছিলেন। এছাড়া সুইডেন, ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে আলফ্রেড নোবেলের বেশ কিছু বিস্ফোরক দ্রব্যের কোম্পানি ছিল।
এই সমস্ত জীবনধ্বংসকারী বিস্ফোরক আবিষ্কার করার কারণে তিনি বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেও তার সম্পর্কে লোকের একটি নেতিবাচক মনোভাব ছিল।
এমনকি ১৮৮৮ সালের ১২ এপ্রিল আলফ্রেড নোবেলের বড় ভাই লুডভিগ ফ্রান্সের কান শহরে বেড়াতে গিয়ে মারা যান তখন ফরাসি দৈনিক ‘লা ফিগারো’ তাকে নোবেলের সাথে গুলিয়ে প্রতিবেদনে চাপেন, ‘মৃত্যুর ব্যাবসায়ী গতকাল কানে মারা গেছেন। সেই প্রতিবেদনে এও বলা হয় কিভাবে মানুষকে দ্রুত সময় হত্যা করা যায়, সেই পদ্ধতি আবিষ্কার করে নোবেল ধনী হয়েছেন।
এই সমস্ত ঘটনার ফলে আলফ্রেড নোবেল এমন কিছু স্মরণীয় করে যাবার কথা ভাবেন যার দ্বারা তার নাম সম্মানের সাথে অক্ষয় হবে পৃথিবীর বুকে। এই চিন্তা ভাবনা থেকেই আলফ্রেড নোবেল ১৮৯৫ তার উইলে লিখে যান, তিনি তার ৯৪ ভাগ সম্পত্তি পুরস্কার আকারে দান করতে চান। উইল করার সময় তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩১০ কোটি সুইডিশ ক্রোনা। যা বর্তমান সময়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার সমতুল্য। কিন্তু জীবদ্দশায় আলফ্রেড নোবেল এই পুরস্কার দেওয়া দেখে যেতে পারেননি। ১৮৯৬ সালে তিনি মারা যান। আলফ্রেড নোবেল এর মৃত্যুর পর ১৮৯৭ সালের নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এবং ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার দেওয়া।
পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার সম্মানে ভূষিত করা হয়। আলফ্রেড নোবেল এর নির্ধারিত সেই কয়েকটি শাখার বাইরে একটি নতুন শাখায় নোবেল পুরস্কার দেবার প্রচলন শুরু করা হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।আর এটি হচ্ছে, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করা।