কোকিল কণ্ঠী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুর খবর সঙ্গীতপ্রেমীদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। যার প্রেমে ভরা গান সবার মুখে হাসি এনেছে, আজ সেই গানগুলো সবার চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কণ্ঠের রানী লতা মঙ্গেশকর আর আমাদের মাঝে নেই। প্রায় এক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। গত ৮ জানুয়ারি লতা মঙ্গেশকর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে মুম্বাইয়ের ব্রীচ ক্র্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লতা মঙ্গেশকরের করোনার সঙ্গে নিউমোনিয়া হয়েছিল। লতা দিদির বয়স দেখে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। এরপর থেকে তিনি নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছিল। চিকিৎসা চলাকালীন মাত্র ২ দিনের জন্য তাকে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে আনা হয়। তারপরে তার স্বাস্থ্যের আবার অবনতি হতে শুরু করলে ফের গতকাল তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে আনা হয়। সেখান থেকে আর ফেরানো যায়নি লতাকে। রবিবার সকালে তিনি প্রয়াত হন।
সুরের মল্লিকা, লতা মঙ্গেশকর তার মায়াবী কন্ঠে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন এবং তার প্রেমে ভরা গান প্রেমিক প্রেমিকাদের মনে স্থান করে নিয়েছিল। প্রেমের গান গাইলেও, প্রেম কি কখনো কড়া নেড়েছিল লতা মঙ্গেশকরের জীবনে? এমন নয় যে সে কখনো ভালোবাসেনি। তাদের প্রেমের গল্পও শুরু হলেও কিছু কারণে তা শেষ করা যায়নি। সারা জীবন অবিবাহিতই থেকে যান লতা। বিয়ের কথা না ভেবে সুরের সাধনাই করে গেলেন জীবনভর। কেন সে প্রশ্ন বহুবার উঠেছে।
বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় লতা মঙ্গেশকর একবার বলেছিলেন, কিশোর দাও তাকে চেয়েছিলেন। অনেক সময় কিশোর কুমার লতাকে স্টুডিওতে অনুসরণ করতেন। কিন্তু লতার এই বিষয়টি একেবারে পছন্দ না হওয়ায় তিনিও এ নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করেন। যদিও তখন পর্যন্ত লতা জানতেন না যে ওই ব্যাক্তি কিশোর কুমার।
লতা মঙ্গেশকর প্রয়াত ক্রিকেটার এবং প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি রাজ সিংয়ের প্রেমে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। রাজ সিং দুঙ্গারপুরের মহারাজাও ছিলেন। একবার লতা মঙ্গেশকর যখন ক্রিকেট দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন, তখন তার মহারাজা রাজ সিং কে ভালো লেগে যায়। অপরদিকে জানা যায় রাজ সিংয়েরও লতার সুরেলা কণ্ঠে মজেছিলেন।পকেটে সবসময় একটি রেকর্ডার নিয়ে ঘুরতেন রাজ। তাতে লতা মঙ্গেশকরের কিছু পছন্দের গান রেকর্ড করা থাকত। কিন্তু বলা হয়, কিছু পারিবারিক কারণে রাজ সিং দুঙ্গারপুর ও লতা মঙ্গেশকরের বিয়ে হতে পারেনি।
অল্প বয়সে বাবাকে হারানো এবং সবচেয়ে বড় বোন হওয়ায় লতা মঙ্গেশকর কে অল্প বয়সেই দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। প্রসঙ্গত লতার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর, তার বাবা (১৯৪২) মারা গিয়েছিলেন। নিজের ছোট ছোট ভাই বোনের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব থাকায় ও লতা মঙ্গেশকর কখনো তার বিয়ের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবেননি।