লস অ্যাঞ্জেলেস নিবাসী ৩৭ বছর বয়সী পুরুষ (পরে যিনি মা হন) বেনেট ক্যাসপার উইলিয়ামস। ১০ বছর আগে ২০১১ সালে বেনেট প্রথম টের পান তিনি পরিবর্তিত হচ্ছেন ধীরে ধীরে। তিন বছর পর পর্যন্ত তিনি নিজেকে স্বেচ্ছা-স্থানান্তর করতে চাননি। ছয় বছর পর তিনি তার ভভিষ্যৎ ‘স্বামী’ মালিককে খুঁজে পান। ২০১৯ সালে তারা বিয়ে করেন। এর পর এই দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন, তারা সন্তান জন্ম দেবেন। এর পর তারা খুঁজতে থাকেন- সন্তান নেয়ার কোন কোন সুযোগ তাদের জন্য আছে। বেনেট মনে করেন গর্ভধারণ এবং সন্তান গর্ভে বহন করা তার জন্য সুবিধাজনক হবে।
বেনেট বলেন, পুরুষ হলেও আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি গর্ভধারণ করতে পারব। কিন্তু এটি এমন কিছু ছিল না যা আমি কখনো করতে চাইনি, যতক্ষণ না আমি শিখেছি লিঙ্গসংক্রান্ত কোনো ধারণা থেকে আমার শরীরের কার্যকারিতাকে কিভাবে আলাদা করতে হয়। আমি আমার শরীরকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ভাবতে শিখেছি। লিঙ্গভিত্তিক স্টেরিওটাইপ নয়, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি এমন ব্যক্তি হতে পারি যে একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনতে পারে। যতক্ষণ না আপনি চেষ্টা না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সত্যিই জানতে পারবে না যে সন্তান ধারণ করা সম্ভব কি-না। জরায়ু নিয়ে জন্ম নিলেই গর্ভ ‘ধারণ বা বহন’ নিশ্চিত হয় না।
তিনি আরো বলেন, আসুন আমরা ‘মাতৃত্ব’র প্রেক্ষিতে ‘নারীত্ব’ সংজ্ঞায়িত করা বন্ধ করি। কারণ এটি মিথ্যা যে সব নারীই মা হতে পারেন। যে সমস্ত মা তাদের সন্তান বহন করে বা যে সমস্ত পুরুষরা সন্তান বহন করেন- তারাই মা। এর কোনোটিই সর্বজনীনভাবে সত্য নয়।
২০২০ সালের মার্চ মাসে বেনেট জানতে পারেন যে তিনি গর্ভবতী। কিন্তু শিগগিরই তাঁর উচ্ছ্বাস মহামারিজনিত উদ্বেগের সঙ্গে যুক্ত হয়। বেনেট বলেন, আমরা অল্প সময়ের জন্য চেষ্টা করেছিলাম। তাই আমরা আশা করি যে প্রক্রিয়াটি বেশি সময় নেবে। এটি ২০২০ সালের মার্চ মাসে, এখানে লকডাউনের প্রায় এক সপ্তাহ আগে ছিল। আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম, কিভাবে এই মহামারিতে আমি নিজেকে এবং আমার শিশুকে নিরাপদ রাখব।
তিনি ২০২০ সালের অক্টোবরে সিজারিয়ানের মাধ্যমে হাডসন নামে একটি সুন্দর শিশুর জন্ম দেন।
কিন্তু হাসপাতালে থাকার সময় বেনেটকে বার বার ‘লিঙ্গ’ নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। তাঁর মুখের দাড়ি আর তাঁর সমতল বুক এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণ ছিল। এ ছাড়া তাঁকে ‘মা’ ডাকায় নার্সদের ওপর ভীষণ খেপেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার গর্ভাবস্থা আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। ‘ভুল লিঙ্গ’ আমার গর্ভাবস্থায় চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সময় আমার প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল। গর্ভাবস্থার ব্যবসা- এবং হ্যাঁ, আমি ব্যবসা বলছি; কারণ আমেরিকায় গর্ভাবস্থার যত্নের পুরো ‘মাতৃত্ব’ বিষয়টি লিঙ্গের সঙ্গে এতটাই জড়িত যে ‘ভুল লিঙ্গ’ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন ছিল। আমার দাড়ি, একটি চ্যাপ্টা বুক এবং একটি ‘পুরুষ’ লিঙ্গ চিহ্নিতকারী থাকলেও, লোকেরা আমাকে ‘মা’ বা ‘ম্যাম’ বলে ডাকতে পারেনি। আর এটাই আমাকে বিষণ্ন আর অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল।
বেনেট বলেন, গর্ভবতী হওয়ার কিছুই আমার কাছে ‘মেয়েলি’ বলে মনে হয়নি। আসলে, আমি মনে করি একটি শিশুকে বহন করা, মহামারির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এবং একা সমস্ত হাসপাতাল ও অ্যাপয়েন্টমেন্টের মুখোমুখি হওয়া আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন, সাহসী কাজ ছিল। আমি একজন বাবা যে নিজের সন্তানকে তৈরি করেছে- এ কথা বলার চেয়ে শক্তিশালী আর কিছুই হতে পারে না।
তিনি বলেন, বাবা হওয়ার সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো হাডসনকে নতুন আবিষ্কারগুলো শেয়ার করা। যখন সে আবিষ্কার করে সে নতুন কিছু করতে পারে, এবং ‘ডাডা’ বলে চিৎকার করে আমার কাছে ছুটে যায়- এটাই আমার সেরা মুহূর্ত। শিশুরা এক আশ্চর্য প্রাণী যারা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো একই চোখে বা পূর্ব ধারণা নিয়ে বিশ্বকে দেখে না।
বেনেট আরো বলেন, আমার ছেলের কাছে ডাডা (ড্যাড) এবং একজন বাবা থাকার চেয়ে স্বাভাবিক আর কিছুই নেই। এবং যখন সে যথেষ্ট বড় হবে, তখন সে-ও জানতে পারবে যে তার ‘দাদা’ই তাকে বহন করেছিলেন এবং তার যত্ন করেছিলেন যাতে সে এই পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে। শিশুরা প্রেম দেখে, তারা ধৈর্য দেখে; আর দেখে প্রতিশ্রুতি। আমার ছেলে নিঃসন্দেহে স্বীকার করবে যে সে আমার কাছ থেকে এসেছে। ঠিক যেমন সে তার চারপাশের সমস্ত ভালোবাসা এবং সৌন্দর্যকে উন্মুক্ত হাত দিয়ে গ্রহণ করে। সূত্র : মেইল অনলাইন