আকাশে বাতাসে পুজো পুজো ভাব এলেই বোঝা যায় যে শরৎ কাল এসে গেছে। বাঙালি প্রায় বছর ধরে অপেক্ষা করে এই সময়ের। মা দূর্গা এবার এই মহামারীর সময় এসেছেন তার বাবার বাড়ি। প্যান্ডেলে গিয়ে ঠাকুর দেখা বা ঘুরে বেড়ানো মণ্ডপের আসে পাশে তা করা যাবেনা। ঈশানীর পুজো করা হবে বিধি নিষেধ মেনেই । অনেক রকম নিয়ম রয়েছে এই দূর্গা পুজোর সাথে । বেশিরভাগ নিয়ম অনেকেরই জানা নেই এই নিয়মাবলীর মধ্যে। জানেন কি দূর্গা পুজোয় কেন ১০৮ টি পদ্মফুল দিয়ে পুজো করা হয়?
দেবী দুর্গার সন্ধিপুজো হয় আশ্বিনের শুক্লাষ্টমীর বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণে। অষ্টমী ও নবমী তিথির শুভ সন্ধিক্ষণই আসলে সন্ধিপুজো বলা হয়। শুভ বলে মানা হয় এই বিশেষ তিথিকে। অনেকগুলো বিশেষ নিয়ম এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম তার মধ্যে হল, ১০৮ টি লাল পদ্ম দেবী দুর্গার পায়ে উৎসর্গ করা হয়। ১০৮ টি প্রদীপ সেই একই সময়ে জানানো হয়।
পুরাণ মতে, অষ্টমী ও নবমী তিথির মিলনক্ষণেই দেবী দুর্গা আবির্ভূত হন, দেবী চামুণ্ডা রূপে। দুই ভয়ানক অসুরকে এই সন্ধিক্ষণে বধ করেছিলেন দেবী চন্ড ও মুন্ড নামক। কৃত্তিবাসের রামায়ণে অন্যদিকে উল্লেখ আছে, আশ্বিন মাসেই রামচন্দ্র অকাল বোধন করেন রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার জন্য। সেখানেও দেবীকে ১০৮ টি পদ্ম নিবেদন করা হয় সন্ধি পুজোর বিশেষ তিথিতে। সেই সময় দেবীদহ থেকে ১০৮ টি পদ্ম ফুল তুলে আনতে বলা হয় হনুমানকে। কিন্তু সেখানে ১০৭ টি পদ্ম পাওয়া যায়। তখন তাঁর পদ্ম সমান নেত্র দান করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাম নিজে এবং দেবী আবির্ভূত হয়ে বরদান করেন যে, তিনি নিজেও সুরক্ষা সরিয়ে নেবেন রাবণের থেকে। রামচন্দ্র পুজো শুরু করেন ষষ্ঠীর দিন। রামের অস্ত্র প্রবেশ করে অষ্টমী এবং নবমী তিথির মাঝে এবং দশমীর দিন রাবণের বিনাশ হয়।
হিন্দুশাস্ত্র বর্ননা অনুযায়ী, ১০৮টি পদ্মের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ধর্মে ১০৮ সংখ্যাটি বেশ গুরুত্ব পায় সর্বক্ষেত্রে। আয়ুর্বেদ বকে মানব শরীরে ১০৮ টি সন্ধিস্থল রয়েছে। আর আর এই ১০৮টি সন্ধিস্থলই দ্বারাই শারীরবৃত্তিয় বহু ক্রিয়া চলছে। তাই সেই জায়গা থেকে এই ১০৮ এর বিশেষ গুরুত্বপূর্ন।
পুরাণ মতে আরো লিখিত আছে, সন্ধিপুজোর সন্ধিক্ষণ হল অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিট। অনেকে আবার বলিদান দেন সন্ধিপুজোর মাহেন্দ্রক্ষণে। কেউ বলি দেন সিঁদুর সিক্ত এক মুঠো মাসকলাই।
সব অশুভ শক্তির দমন করেন দেবী দুর্গা বলে মনে করা হয়। তাই প্রত্যেক বছর মা দুর্গার আগমন হয় খারাপ সময় ও দুষ্টের বিনাশ করতে কান্ডারী হয়ে।