দূর্গা পুজোর মহাসপ্তমী (Durga puja maha saptami) তিথির একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আচার হল নবপত্রিকা (nabapotrika) স্নান। একে কলাবউ হিসাবেও ডাকা হয়। রীতি অনুযায়ী নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণের মাধ্যমে মা দুর্গার মহাস্নান সম্পন্ন হয়। আবার পূজা মণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের আগে, নব পত্রিকার সামনে দুর্গার আবাহন এবং পুজো করা হয়। পত্রিকাস্থ অন্য কোনও দেবীকে আলাদা ভাবে পুজো করা হয় না।
বাঙালির দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য স্থান নিয়েছে ‘নবপত্রিকা’-র স্নান। বারোয়ারি পূজো, সর্বজনীন দুর্গা পূজো এবং বেশ কিছু পারিবারিক পুজোতে গঙ্গা (বা অন্য কোনো নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ে) নবপত্রিকা ডুবিয়ে এনে এই স্নানপর্ব সারা হয়। তবে ব্যাতিক্রম বেশ কিছু পারিবারিক পুজোতে নবপত্রিকার ‘মহাস্নান’ সম্পন্ন করা হয় দুর্গাদালানেই।
কিন্তু কি এই নবপত্রিকা?
প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ। এই নবপত্রিকা স্নানকে অনেকে কলা বউ স্নানও বলে থাকেন। সূর্য ওঠার আগেই, একটি কলাগাছ পবিত্র গঙ্গার জলে স্নান করিয়ে, তারপর এটিকে নববধূর (কলা বউ) মতো নতুন শাড়ি পরানো হয়।
এই কলাবৌ ই হল নবপত্রিকা যা দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীক, যা অবশ্যই কল্পিত। একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি বধূর রূপ আনা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নামই কলাবউ। এই নবপত্রিকার মাধ্যমে দেবীর নয় রূপের পুজোঅর্চনা চলে।
যেমন-কলা গাছ বা রম্ভা: এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী; কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা; হলুদ গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা; জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী; বেল গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা; ডালিম/বেদানা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা, অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা; মানকচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা; ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
বাংলায় কোথাও প্রতিপদ তিথি থেকে, আবার কোথাও ষষ্ঠী থেকে দেবীর বোধন আরম্ভ হলেও প্রকৃত দুর্গাপুজোর সূচনা হয় মহাসপ্তমী থেকে। ওই দিন সকালে নবপত্রিকা স্নানের পরে যথাবিহিত নৈবেদ্য-উপচার সাজিয়ে আরম্ভ হয় পুজো!