পলাশীর যুদ্ধের কোন ষড়যন্ত্রকারীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। মীরজাফর ও তারপুত্র মিরণ, জগৎ শেঠ ও মহারাজা রূপচাঁদ, ঘষেটি বেগম, লর্ড ক্লাইভ ইত্যাদি কেউই পরিত্রান পাননি নিজেদের কর্মফল থেকে। যেন ভাগ্য তার তার নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছে। কি হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতক জানেন।
বাংলার ইতিহাসের কাল বদলের সাক্ষী মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ যেমন দেখেছে ষড়যন্ত্রকারীদের ইতিহাস তেমনি প্রত্যক্ষ করেছে তাদের করুণ পরিণতি। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল যারা তার মধ্যে মুখ্য ছিল ঘষেটি বেগম , মীরজাফর, তার পুত্র মীরন, জগৎ শেঠ ও মহারাজা রূপচাঁদ এবং ব্রিটিশ লর্ড ক্লাইভ প্রমুখ। জেনে নিন কি পরিণতি হয়েছিল তাদের।
মীর জাফর:
বিশ্বাসঘাতক শব্দের যেন আরেকটি রূপ বাংলার মানুষের কাছে মীরজাফর। পবিত্র কুরআন শরীফ কে সাক্ষী রেখে তিনি সিরাজউদ্দৌলাকে জানিয়েছিলেন তিনি তার সাথে থাকবেন। অথচ এর পরেই বেইমানি করেন। মীর জাফরের শেষ জীবন ভীষণ কষ্টে কেটেছিল। জামাতা মীর কাশেমের হাতে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং পরবর্তীতে দুরারোগ্য কুষ্ঠ ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন।
ঘষেটি বেগম:
সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসন থেকে সরানোর ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অন্যতম ঘষেটি বেগম। ঘষেটি বেগম ছিলেন নবাব আলীবর্দী খাঁর কন্যা এবং সিরাজের খালা। ঘসেটি বেগমের উদ্দেশ্য ছিল নিজের পালিত পুত্র কে সিংহাসনে বসানো এই কারণে সিরাজদ্দৌলা কে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। লিপ্ত হয়েছিলেন জঘন্য ষড়যন্ত্রে। পলাশীর যুদ্ধের পর সিরাজের অবসান ঘটল ঘষেটি বেগমের জীবন সুখের হয় নি। ষড়যন্ত্রে যারা তার দোসর ছিল ,তারাই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধের পরে মীর জাফরের পুত্র মীরন ঘসেটি বেগম কে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দী করে রাখে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জিনজিরা প্রাসাদ এর কাছেই এক ভোররাতে নদীতে ডুবিয়ে মীরণ তাকে হত্যা করে।
মিরন:
মীর জাফরের জেষ্ঠ পুত্র মিরন। পলাশী যুদ্ধ ঘিরে অগুনতি কুকর্মের নায়ক এই মিরন। ইংরেজদের হাতেই হত্যা হয় তার। মিরনকে হত্যা করে মেজর ওয়ালস। তার এই মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ইংরেজরা বলে বেড়ায় যে বজ্রপাতে মিরন মারা যায়।
জগৎ শেঠ ও মহারাজা রূপচাঁদ:
মীর জাফরের জামাতা মীর কাশেমের হাতে এরা নিহত হন। জানা যায় জগৎশেঠ কে দূর্গের চূড়া থেকে গঙ্গা বক্ষে নিক্ষেপ করা হয়।
মহারাজা নন্দকুমার:
তহবিল তছরুপ করার অভিযোগে ফাঁসি তে ঝোলানো হয় তাকে।
রায় দূর্লভ :
যুদ্ধের পর তাকে কারাগারে বন্দী করা হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।
উমিচাঁদ:
পলাশীর যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভ দ্বারা প্রতারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পাগল অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তার মৃত্যু ঘটে।
রাজা রাজবল্লভ:
পদ্মায় ডুবে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
মুহাম্মদীবেগ:
মুহাম্মদীবেগ সিরাজউদ্দৌলার মাতামহীর অন্নে প্রতিপালিত হয় এবং ছোটো থেকে সিরাজ এর মিত্রসম ছিল। কিন্তু এই মুহাম্মদীবেগ সিরাজের বিরুদ্ধে জঘন্য ষড়যন্ত্রে শামিল হয়। শুধু তাই নয় সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ইনি। মৃত্যুর পূর্বে সিরাজ দু’রাকাত নামাজ পড়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মুহাম্মদীবেগ। পরবর্তী সময়ে মুহাম্মদী বেগের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে, এবং সে কোনো কারণে কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে মারা যায়।
রবার্ট ক্লাইভ:
ছলচাতুরি করে সিরাজকে হারিয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা পান রবার্ট ক্লাইভ। ইংরেজ রা তাকে প্লাসি হিরো নামে ডাকতো। এই রবার্ট ক্লাইভ ব্রিটেনে ফিরে গিয়ে একদিন অজ্ঞাত কারণে বাথরুমে ঢুকে নিজের গলায় নিজের হাতেই ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করে।