এই পৃথিবীতে কারও মৃত্যু হলে তখন তাঁর শেষকৃত্য খুব বেশি দেরি না করে সম্পন্ন করে ফেলা হয়। অনেক সময় পরিস্থিতির কারণে যেমন যদি কারো আত্মীয়-পরিজন দূরে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে তা শেষ করতে দেরি হয়ে যায় কিন্তু সেই ক্ষেত্রেও চেষ্টা করা হয় সেই সব মৃতদেহ কোনো উপায়ে সংরক্ষণ করার যাতে পচন না ধরে। কিন্তু চেষ্টা করা হয় যাতে দ্রুততার সাথে মৃতদেহ কবর দিয়ে অথবা দাহকার্য করে মৃতের অন্তিম সংস্কার সম্পন্ন করার। তবে এত গেল পৃথিবীর কথা। কিন্তু মহাকাশচারীদের জন্য তো এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা থাকা সম্ভবই না।
মহাকাশে কোন স্পেস স্টেশনে বা মহাকাশ যানে থাকার সময় যদি কোনো মহাকাশচারী মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ সাধারণত পৃথিবীতে আনা সম্ভব হয় না। আবার মহাকাশে শব সংরক্ষণের কোনও ধরনের ব্যবস্থা থাকে না। তাহলে সেক্ষেত্রে উপায় কি হবে? উত্তর জালালের নাসার এক মহাকাশযাত্রী তথা বিজ্ঞানী টেরি ভির্টস।
তিনি জানাচ্ছেন সাধারনত মহাকাশে কারও মৃত্যু হলে সেই পরিস্থিতিতে মরদেহ এয়ারলক করে সেই শবদেহ শূন্যে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই মৃতদেহ সাধারনত মহাকাশে দীর্ঘ সময় ধরে মহাশূন্যে ভেসে বেড়ায়। মহাকাশে তাপমাত্রা অত্যন্ত কম হওয়ায় সেটি আইস মমি হয়ে থাকে। এরম ভাবে মহাকাশে ভাসিয়ে দেওয়ার পর এয়ারলক অবস্থাতেই বেশ কয়েকশো বছর এমনকি বেশ কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত এই আইস মমি মহাকাশে ভেসে বেড়াতে পারে।অনন্তকালের জন্য ঘুরে বেড়াতে পারে মহাকাশে। যদি না কোনো শবদেহ কোনও মহাশূন্যের বস্তু যেমন আস্টোরয়েডে বা গ্রহাণুতে ধাক্কা খেয়ে নষ্ট না হয়।
অনেক সময় মহাকাশের মৃতদেহ বিস্ফোরন হতে পারে তীব্র চাপের তারতম্যের কারণে । মহাকাশে এইভাবে মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়াও আরো সৎকারের আরো একটি উপায় আছে যা বিজ্ঞানীরা ভাবনা চিন্তা করছে। মৃতদেহকে যদি কবর দিতে হয় সেক্ষেত্রে সব থেকে কাছের মঙ্গল গ্রহের মাটিতে কবর দেওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে প্রথমে মৃতদেহকে আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে ফেলতে হবে। মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠ সাম্য রক্ষার্থে যা অত্যন্ত আবশ্যক।
নাসা অ্যাপোলো অভিযান চালানোর সময় প্রথম স্পেস সুটের টেস্ট করছিল। সেই সময় এই বিষয়টি প্রথমবার সকলের চিন্তায় আসে। মহাকাশচারীরা জানাচ্ছেন মহাকাশ থেকে মৃতদেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক সময় লাগতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা পৃথিবীতে আনতে বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে যায়। মহাকাশযানে সংরক্ষণের ব্যাবস্থা না থাকায় সেটা সম্ভব না তাই মহাকাশে মৃত্যু হলে মৃতদেহ মহাকাশে ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।