ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির ৩৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই দুর্ঘটনা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আর মর্মান্তিক শিল্প বিপর্যয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। 1984 সালের ২রা ডিসেম্বর রাত এবং ৩রা ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ভোপাল শহরে হাজার হাজার মানুষের জীবন হানি হয়েছিল। ভারতে, ২রা ডিসেম্বরকে জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা হয় যারা সেই দুর্ভাগ্যজনক দিনে দুঃখজনকভাবে তাদের জীবন হারিয়েছিল তাদের স্মরণে। কিন্তু আজও অনিয়ন্ত্রিত শিল্প দূষণ আমাদের দেশের শহরগুলিকে শ্বাসরোধ করে চলেছে, এবং অবহেলার কারণে মানুষ মারাও যাচ্ছে।
৩৭ বছর পার হলেও আজও এ ঘটনার প্রভাব বহন করে চলেছে ভোপাল শহর। কি হয়েছিল ৩৭ বছর আগের সেই অভিশপ্ত রাতে। ফিরে দেখুন:
ঘড়ির কাঁটা তখন মধ্যরাত্রি পার করেছে। ভূপালের বেশিরভাগ বাসিন্দা কনকনে ঠান্ডায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাসয়নিক মিথাইল আইসোসায়ানেট এর মত ভীষণ বিপদজনক রাসায়নিক ব্যাবহার করে ইউনিয়ন কার্বাইড কীটনাশক প্রস্তুতকারক মার্কিন মালিকানাধীন কারখানার আশেপাশের চালা ঘর গুলোর বাসিন্দারাও আর বাকি দিনের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিল। সেই সময়ে তাদের উপর নেমে আসে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার অভিশাপ। অতিরিক্ত চাপ সহ্য না করতে পেরে কারখানার ভূগর্ভস্থ একটি ট্যাংকের মুখের একটি ভালভ্ ফেটে গেলে তার ভেতর থেকে গ্যাস লিক করতে শুরু করে। বাতাসের চেয়ে গ্যাস ভারী হওয়ায় উপরে না উঠে সেই বিষাক্ত গ্যাস মাটি ঘেঁষে বের হয়ে আশেপাশের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। নয় লক্ষ বাসিন্দার ভোপাল শহরে ছড়াতে থাকে এই গ্যাস। গ্যাস ঘন মেঘের মত ছড়াতে থাকে।
কারখানা লাগোয়া বস্তিবাসীর প্রথম নাকে আসে একটা উৎকট গন্ধ। তাদের চোখ লঙ্কা পোড়ার মত জ্বলতে শুরু করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই শুরু হয়ে যায় মারাত্মক নিঃশ্বাসের কষ্ট আর বমি। হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। সকলেই উদভ্রান্ত।
গ্যাস লিকের করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রাতের ভোপাল শহরে দেখা দেয় মৃত্যু মিছিল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য লাইন পড়ে যায়৷ শ্বাসকষ্ট, চোখ ও ত্বকের জ্বালা পোড়া, বুকে জ্বালায় মানুষ ছটফট করতে থাকে৷ ডাক্তাররাও অবাক হয়ে যায় হঠাৎ কিভাবে হচ্ছে এমন। ভোপাল শহরের রাস্তা ঘাটে জমে যায় মৃত আহত মানুষ, পশু পাখির স্তূপ।
সরকারি হিসেব বলে সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭৮৭ জন মানুষ৷ যদিও অন্যান্য নানা সংগঠনের দাবি অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজারের গন্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে৷ এছাড়া সেই দুর্ঘটনার জেরে শারীরিক ভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন বহু মানুষ। ২০০৬ সালে এক হলফ নামা দিয়ে মধ্যপ্রদেশ সরকার জানায়, এই গ্যাস দুর্ঘটনা কারণে ৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ১২৫ জন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ যার মধ্যে ৩৯০০ জন আংশিক ও সম্পূর্নরূপে প্রতিবন্ধী হয়ে যান৷
ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে দেখিয়েছে পরিবেশ দূষণ আর বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি কতটা মারাত্মক হতে পারে। তাই এই দিনটি শুধুমাত্র সেই দুর্ঘটনায় যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এই দিনটি শিল্প দূষণ ও নিয়ন্ত্রণ শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ে জনমানসে অবহেলার দিকটিও তুলে ধরে। যা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এই দিনটির উদ্দেশ্য।